বুধবার | ৩ ডিসেম্বর | ২০২৫

স্বেচ্ছায় নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা

৪০ বছর যাবত তুরস্কের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চুক্তি অনুসারে স্বেচ্ছায় নিজেদের নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

সম্প্রতি তুরস্ক সংলগ্ন উত্তর ইরাকের কুর্দি অঞ্চল সুলাইমানিয়ায় এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তুরস্ক কর্তৃক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত ও আমেরিকা-ইউরোপের সমর্থন পাওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটির সদস্যরা আগুনে অস্ত্র জ্বালিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করে।

প্রাথমিকভাবে ২০-৩০ জনের পিকেকে সদস্য গত শুক্রবার নিজেদের অস্ত্র জ্বালিয়ে দেয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান একে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর মধ্যদিয়ে আমরা সেই রক্ত জিঞ্জির থেকে মুক্ত হলাম, যা আমাদের পায়ে বাঁধা ছিলো। পিকেকের এই পদক্ষেপ সমগ্র অঞ্চলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।

সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কের ইমরালি দ্বীপে বন্দী থাকা কুর্দিদের প্রভাবশালী নেতা আব্দুল্লাহ ওকালান সশস্ত্র সংগ্রামের ইতি টানার ঘোষণা দিলে গত মে মাস থেকে তুরস্ক ও কুর্দিদের সম্পর্কে অগ্রগতি ঘটতে শুরু করে। বহু বছর চেষ্টার পর তুরস্ক এই নেতার মাধ্যমে কুর্দিদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়।

আব্দুল্লাহ ওকালানের কথায় সিরিয়া, ইরাক ও তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারের বিনিময়ে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিতে ও আত্মসমর্পণে সম্মত হয়। এই শর্তও রাখে যে, তাদের আত্মসমর্পণ হবে স্বেচ্ছায়। কোনো সরকার বা সরকার প্রতিনিধির কাছে নয়। তবে সিরিয়ার কুর্দিদেরকে আহমদ শার’আর সরকারের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে বিদ্রোহের ইতি টানতে দেখা যায়। সিরিয়া বিপ্লবে অবদান রাখায় তাদের শর্তগুলোও ছিলো ইরাক ও তুরস্কের কুর্দিদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন।

জুনে সিরিয়ার কুর্দিদের অস্ত্র সমর্পণের পর তাদের গুরু সমতুল্য প্রভাবশালী নেতা ওকালান একে কুর্দিদের ঐতিহাসিক অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সংগ্রামের সশস্ত্র রূপকে স্বেচ্ছায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনী কাঠামোয় রূপান্তরের প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেছিলেন। সিরিয়া, ইরাক ও তুরস্কের বাস্তবতায় একে সংগ্রামের কার্যকরী ও ফলপ্রসূ উপায় বলে উল্লেখ করেছিলেন।

কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ১৯৮৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর যাবত উত্তর-পূর্ব সিরিয়া, উত্তর ইরাক ও তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় বৃহৎ স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়াতে সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এক পর্যায়ে তাদের সংগ্রাম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে রূপ নেয়। আমেরিকা-ইউরোপের ইন্ধন ও সহযোগিতায় তারা তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে শুরু করে। অসংখ্য সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে। যার প্রেক্ষিতে তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করা হয়। পিকেকে, ওয়াইপিজি, ওয়াইপিজে, টিএকে ও পিওয়াইডির মতো সংগঠন ও দলগুলোকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা হয়।

সূত্র: আল জাজিরা

spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img