বৃহস্পতিবার | ২৩ অক্টোবর | ২০২৫

টিউলিপের আয়কর নথিতে জালিয়াতির প্রমাণ পেল দুদক

পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের আয়কর নথিতে জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের ২০০৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ১৩ বছরব্যাপী দাখিল করা আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করেছে। এসব নথিতে একাধিক অসঙ্গতি ও মিথ্যা তথ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুযায়ী, টিউলিপ ২০০৬–২০১৫ করবর্ষে নিয়মিতভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিলেও ২০১৯–২০ করবর্ষ থেকে রিটার্ন জমা দেওয়া বন্ধ করে দেন। পূর্ববর্তী রিটার্নে প্রতি বছর ‘অ্যাডভান্স টুওয়ার্ডস ডেভেলপার্স’ নামে ৫ লাখ টাকা করে খরচ দেখানো হয়, যেটি বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে জানায় দুদক।

দুদকের তদন্তে জানা গেছে, ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা থাকা সত্ত্বেও টিউলিপ সেটির তথ্য কর নথিতে গোপন রেখেছেন। বরং তিনি ফ্ল্যাট ক্রয়ের নামে আবাসন কোম্পানিকে অগ্রিম টাকা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন, যা বাস্তবে ঘটেনি। পরবর্তীতে এই ফ্ল্যাট ‘হেবা’ হিসেবে তার এক প্রতিবেশীর নামে স্থানান্তরের দাবি করেন তিনি। তবে হেবার নথি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সম্পাদন না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে তৈরি করা হয়, যা আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি হস্তান্তরের দলিলে থাকা স্বাক্ষর সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নোটারি পাবলিক গাজী সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন—সেগুলো জাল এবং নকল করা।

এছাড়া, ওই ফ্ল্যাটের মালিকানার রেজিস্ট্রেশন তার নামে ছিল না, এবং হেবার দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিতও হয়নি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের ধারণা—ফ্ল্যাটটি অবৈধ উপায়ে অর্জিত এবং তা গোপন রাখতে কর নথিতে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

দুদক আরও জানায়, আয়কর নথিতে টিউলিপের নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে—কখনও ‘রিজওয়ানা সিদ্দিক’, কখনও ‘রিজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ’, আবার কোথাও ‘টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক’। এসব নথিতে ব্যবহৃত স্বাক্ষরগুলোর মধ্যে মিল নেই এবং মনে হয়, ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির হাতে লেখা। নামের বানান ও স্বাক্ষরেও একাধিক জায়গায় অসঙ্গতি রয়েছে।

যদিও নথিতে তার বাবা-মায়ের নাম যথাক্রমে শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানা এবং জন্মতারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ সঠিকভাবে লেখা রয়েছে। নথিতে সংযুক্ত ছবি দিয়েও তাকে চিহ্নিত করা গেছে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “রিজওয়ানা সিদ্দিক ওরফে টিউলিপের বিরুদ্ধে একটি মামলার তদন্ত চলমান। তদন্তের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় দালিলিক প্রমাণ জব্দ করা হয়েছে। এসব নথি বিশ্লেষণ করে তদন্ত কর্মকর্তা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন, যা কমিশনের অনুমোদনের পর আদালতে উপস্থাপন করা হবে।”

spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img