মঙ্গলবার | ১৬ ডিসেম্বর | ২০২৫

আরাকান আর্মি বিভিন্ন এলাকা দখলে নিলেও রোহিঙ্গাদের উন্নতি হয়নি : ইউএনএইচসিআর প্রধান

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কেবল মিয়ানমারের ভেতরেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘মিয়ানমারের সাহসী পদক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার অবসান হবে না। এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। আর সমাধানও সেখানেই। এখন আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা দখলে নিলেও রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তাদের জীবনে প্রতিদিনের বাস্তবতা হলো গ্রেফতার ও আটক হওয়ার ভয়, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় প্রবেশাধিকার সীমিত, চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা, জোরপূর্বক শ্রম ও নিয়োগ। প্রতিদিনই তারা বর্ণবাদ ও আতঙ্কের শিকার।’

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আট বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম সহিংসতায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে যায়। আর অনেকে রাখাইন রাজ্যেই বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়ে যায়।

বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশটি বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং ২০২৪ সালের নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতের পর আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করেছে।

ইউএনএইচসিআর প্রধান আরও বলেন, ‘অসংখ্য চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গার আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা দেখিয়েছে, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীন মনোভাব যখন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে, সে সময়েও সহানুভূতি দেখানো সম্ভব। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে জীবনরক্ষা করে বাংলাদেশ তা প্রমাণ করেছে।’

তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তহবিল, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তবে গ্রান্ডি জোর দিয়ে বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা এই সংকট সমাধান করতে পারবে না।

তিনি প্রভাবশালী দেশগুলোকে আহ্বান জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বাড়ানোর যাতে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা যায়। সঙ্গে আস্থা পুনঃস্থাপন করে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই সমাধান গ্রহণ করা যায়।

অন্যান্য সংঘাত থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, ‘ধারাবাহিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও নতুন পন্থার মাধ্যমে জটিল সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করা সম্ভব।’

গ্রান্ডি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের জনগণের জন্য ন্যায়সঙ্গত, বাস্তব ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই। রোহিঙ্গাদের দুর্দশার স্থায়ী সমাধানে আমাদের সামনে এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।’

spot_img
spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img