রবিবার | ৫ অক্টোবর | ২০২৫

৬ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস

জুলাই জাতীয় সনদের আইনী ভিত্তি প্রদান এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা-সহ ৬ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা খেলাফত মজলিস।

শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে খেলাফত মজলিস।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকের ব্রিফিংয়ের শুরুতেই ইসরাইলী গণহত্যার শিকার গাজাবাসীর বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ ভাঙতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কর্মীদের গাজাগামী “গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা”র নৌবহরে ইসরাইলী বাহিনীর হামলা ও কয়েক শত মানবাধিকার কর্মীকে অপহরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অন্যায়ভাবে আটক মানবাধিকার কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ২৪’র জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সহস্রাধিক শহীদের আত্মদান ও হাজারো ছাত্র জনতার ত্যাগের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণের প্রত্যাশা ছিলো খুনী ফ্যাসীবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই হচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব। পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার শুরু হলেও তা কাঙ্ক্ষিত পরিসর ও গতি পায়নি। আমরা বারবার ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছি। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ২০২৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও আগামী মাহে রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন চাই। এ লক্ষ্যে ৩০০ আসনে আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যেই সারাদেশে খেলাফত মজলিসের ২৫৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আজকে আমরা এমপি প্রার্থীদেরকে নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে মতবিনিময় করছি। কিন্তু নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন তা এখনো প্রস্তুত হয়নি। প্রশাসনিক সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন রয়েছে তার কোন সমাধান হয়নি। দেশের স্থিতিশীলতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বে সংস্কারের যে দাবী ছিলো তার কিছুই হয়নি। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার সংক্রান্ত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ চূড়ান্ত করেছে। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর বাস্তবায়ন নিয়ে একধরণের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। দেশ-জাতির স্বার্থে অবিলম্বে এ অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরী।

আহমদ আবদুল কাদের বলেন, সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছুতে সক্ষম হয়েছে, যা জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ হিসেবে সাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু অনেকে চাইছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে। কিন্তু যারাই নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন তারা এসব বিষয় যথাযথভাবে
বাস্তবাযন করবে কি না সে বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অতি দ্রুত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে এর আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অন্য দিকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণার আগেই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জনগণের মধ্যে একদিকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে যেমন সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে অন্য দিকে যথাসময়ে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যেই খেলাফত মজলিস জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারি ২০২৬’র জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সহ ৬ দফা দাবীতে ৩ দফা কর্মসূচী পালন করেছে। জনগণ এসব কর্মসূচীতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে।

তিনি বলেন, এমতাবস্থায় অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করা ও এর আইনি ভিত্তি দেয়া। ঘোষিত জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারি ২০২৬’র জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য খেলাফত মজলিসের প্রস্তাবনা পুনরায় উল্লেখ করতে চাই,

ক। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষরের পর দুই মাসের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে এই সনদকে সাংবিধানিক ও আইনি মর্যাদা বা বৈধতা প্রদান করা। অথবা-

খ। জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় পলিসি বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্ডিনেন্স বা নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা। আর সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির চৎড়পষধসধঃরড়হ তথা সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে আশু কার্যকর করা। তবে শর্ত হচ্ছে যে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই সেগুলো জধঃরভু (আনুষ্ঠানিক অনুমোদন) করতে সংসদ সদস্যগণ বাধ্য থাকবেন- এ মর্মে সকল দল ও পক্ষের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এ প্রস্তাবনার সাথে ঐকমত্য কমিশনে প্রেরিত দেশের আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও প্রস্তাবনারও মিল রয়েছে। কিন্তু আমাদের এ প্রধান দাবীসহ ৬ দফা দাবী পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ কোন পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় আমরা নিম্নোক্ত নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করছি:

১। ৫-৯ অক্টোবর গণসংযোগ
২। ১০ অক্টোবর ঢাকা সহ বিভাগীয় শহরে গণমিছিল
৩। ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরন স্মারকলিপি প্রদান

এ ছাড়াও খেলাফত মজলিস আগামী ১৫-৩০ অক্টোবর সারাদেশে সংসদীয় আসন ভিত্তিক পক্ষকালব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী পালন করবে।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img