দীর্ঘ ৪৪ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (চাকসু) নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেল ভিপি-জিএসসহ মোট ২৪টি পদে বিজয় অর্জন করেছে। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে চাকসুতে শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা নেতৃত্বে এসেছিল।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত চারটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের ভোটের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ভিপি (সহসভাপতি) পদে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন রনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি শিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিল শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।
জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব ৮ হাজার ৩১ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।
এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক, যিনি ৭ হাজার ১৪ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট।
চাকসুর মোট ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টি পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা। সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন তামান্না মাহবুব নামের এক ছাত্রী।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। প্রার্থী ও ভোটাররা উৎসবমুখরভাবে অংশ নিয়েছেন।”
তবে ফলাফল ঘোষণার আগে কিছু স্থানে উত্তেজনা দেখা দেয়। বুধবার রাত একটার পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মুক্ত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের বাইরে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির-সমর্থকরা অবস্থান নিলেও কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাতেই ক্যাম্পাসে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
চাকসুর ইতিহাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ জয় ছিল ১৯৮১ সালে, যখন ভিপি নির্বাচিত হন জসিম উদ্দিন সরকার এবং জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা নেতৃত্বে ফিরেছে।