আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে ১৬ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কিশোর হাসান ফারহান আল-আওয়াদের মর্মান্তিক গল্প গাজ্জার শিশুদের ওপর ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের গণহত্যা ও অবরোধের ভয়াবহ প্রভাব আবারও সামনে এনেছে। বুরাইজি শরণার্থী শিবিরের এই কিশোর পরিবারের জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু হয়।
হামলার ঘটনা
গাজ্জায় ইসরাইলি অবরোধের কারণে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট চলছে। এই পরিস্থিতিতে হাসান বন্ধুদের সঙ্গে রান্নার জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে বের হয়েছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ ইসরাইলি বাহিনী গুলি চালায় এবং পরপর দুইটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।
বিস্ফোরণস্থলের কাছ থেকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কয়েক দিন আইসিইউতে থাকার পর সে প্রায় তিন মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
হাসানের বেদনাহত বর্ণনা
হামলার মুহূর্তের কথা স্মরণ করে হাসান বলেছে, “আমি আর আমার বন্ধুরা কাঠ তুলছিলাম। হঠাৎ আমাদের ওপর গুলি চলে। দুইটি বোমা পরপর বিস্ফোরিত হয়। চোখ খুলে দেখি, আমার পা দুটো নেই। আমি তিন দিন কোমায় ছিলাম। এখন আমার বয়স ১৬, কিন্তু আমি আমার প্রায় পুরো শৈশব হারিয়েছি।”
হাসান আরও বলে, “আমি এখনো শিশু। কয়েকটা কাঠ জড়ো করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু এর খেসারত দিতে হলো, আমার বন্ধুদের আর আমার পা দিয়ে। এই যন্ত্রণার যোগ্য কে? আমি শুধু চাই, দুনিয়া আমাকে শুনুক। আর কৃত্রিম পা দিয়ে যেন নতুন করে জীবন শুরু করতে পারি।”
মানসিক ট্রমার মধ্যেও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে বলে, “আমি জীবনকে ভালোবাসি। আমি আবার স্কুলে ফিরতে চাই, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।”
শিশু অঙ্গচ্ছেদে গাজ্জা এখন বিশ্বের শীর্ষে
গত সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানান, ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজ্জা বিশ্বের মাথাপিছু সর্বোচ্চ শিশু অঙ্গচ্ছেদ হওয়ার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
৬ হাজার অঙ্গহারা মানুষের জরুরি পুনর্বাসনের আহ্বান
গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলের নির্যাতন ও হামলায় অঙ্গ হারানো ৬,০০০ মানুষ এখনই দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের প্রয়োজন অনুভব করছে। মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, এতে হাজারো পরিবার ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গাজ্জায় অঙ্গচ্ছেদের পরিস্থিতি চমকে দেওয়ার মতো, সব অঙ্গচ্ছেদের ২৫ শতাংশই শিশু, যারা অল্প বয়সেই স্থায়ী প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, হাজারো আহত বেসামরিক মানুষ ও তাদের পরিবার গভীর মানবিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। শারীরিক পুনর্বাসন, পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।
তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়, গাজ্জার অঙ্গহারা মানুষকে অগ্রাধিকার দিতে এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবায় তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে।
ইসরাইলের গণহত্যা; নিহত ৭০ হাজার, আহত ১ লাখ ৭১ হাজার
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বাহিনী গাজ্জায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ। ইসরাইলের এই গণহত্যায় পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সূত্র: আনাদোলু









