ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তার কান্দাহারে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় গড়ে ওঠা মাশরুম খামারগুলোতে এখন ফসল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের মতে, মাশরুম দ্রুতই আফিম পপির কার্যকর বিকল্প হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
কান্দাহার প্রদেশের কৃষি, সেচ ও পশুপালন অধিদপ্তর জানিয়েছে তাদের উদ্যোগে, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দমন দপ্তর (ইউএনওডিসি)-এর আর্থিক সহায়তা এবং ডাচ কমিটি ফর আফগানিস্তানের কারিগরি সহযোগিতায় খাকরেজ জেলার ৩০টি দরিদ্র পরিবারকে ২০ হাজার ডলারের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে, যাতে তারা মাশরুম খামার স্থাপন করতে পারে। বর্তমানে এসব খামারে ফসল তোলা চলছে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো আফিম পপির বিকল্প ফসল প্রচার করা, কৃষকদের জীবিকা উন্নত করা, উচ্চ ফলনশীল উদ্ভিদ পরিচিত করা এবং আধুনিক ও মানসম্মত কৃষিপদ্ধতির বিস্তার ঘটানো। তাদের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র এক কিলোগ্রাম বীজ থেকে একজন কৃষক ঘরেই এক মাসে ১০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করতে পারেন, যা সহজ, কম খরচের এবং অত্যন্ত লাভজনক।
কান্দাহার কৃষি অধিদপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মাদ হানিফ হাকমল বলেন, “প্রায় ৩০টি পরিবারের জন্য মাশরুম চাষে প্রয়োজনীয় ২৩ ধরনের সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বীজও দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা খামার স্থাপন করে ফসল তুলতে পারে। কান্দাহারে এই প্রথম মাশরুম চাষ শুরু হলো। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও আমরা এই ফসলের প্রচার চালাব, যাতে মানুষ ঘরে বসেই চাষ করে আয় বাড়াতে পারে। বর্তমানে কান্দাহারে এক কিলোগ্রাম মাশরুমের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ আফগানি।”
ডাচ কমিটি ফর আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা বলেন, মাশরুম চাষের জন্য ২৩ ধরনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও উপকরণ পরিবারগুলোর মধ্যে আগেই বিতরণ করা হয়েছিল এবং এখন তাদের ফসল সংগ্রহ চলছে। তারা এই ফসলকে আফিম পপির একটি উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করেন এবং কৃষকদের সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
ডাচ কমিটির কান্দাহার প্রতিনিধি আবদুল হাদি দাউদজি বলেন, “আমরা ৩০টি পরিবারের জন্য মাশরুম চাষ ও সংগ্রহের প্রয়োজনীয় ২০ ধরনের উপকরণ ও সরঞ্জাম বিতরণ করেছি, যার মোট মূল্য ২০ হাজার ডলার। এই সহায়তা আফিমচাষের একটি বিকল্প হিসেবে দেওয়া হয়েছে।”
কৃষকেরা বলছেন, মাশরুম চাষে শ্রম কম লাগে এবং লাভ বেশি, বিশেষ করে খরা পরিস্থিতিতে এটি অত্যন্ত উপযোগী।
কান্দাহারের কৃষক সিবগাতুল্লাহ বলেন, “মাশরুম আফিম ও হাশিশের পুরোপুরি বিকল্প হতে পারে। প্রতি বছর খরা বাড়ছে, আর এই ফসল তার জন্য খুব উপযোগী। আমরা অনুরোধ করছি আরও খামার স্থাপন করা হোক এবং পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা দেওয়া হোক।”
আরেক কৃষক মোহাম্মাদ নাসিম বলেন, “আমরা স্থানীয় বাজারে এবং প্রতিবেশীদের কাছে সহজেই মাশরুম বিক্রি করতে পারি। আফিম ও অন্যান্য মাদক ফসলের তুলনায় এটি অনেক ভালো।”
কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা বিকল্প ফসল সনাক্ত ও প্রচারের প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে এবং কান্দাহারের জলবায়ুর সঙ্গে মানানসই উচ্চ ফলনশীল উদ্ভিদের পরিচয়ে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
সূত্র: আরিয়ানা নিউজ









