ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এখন কৃষিকে শুধু খাদ্য নিরাপত্তার অংশ নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশলগত খাত হিসেবে বিবেচনা করছে। খনিজ, যোগাযোগ ও বাণিজ্যখাতের পাশাপাশি তালেবান সরকার কৃষিভিত্তিক শিল্পেও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাবুলের ইস্তালিফে উদ্বোধন করা হয়েছে একটি আধুনিক কিশমিশ কারখানা। এই কারখানার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১০ হাজার টন। দেশীয় উৎপাদনের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক রপ্তানি বৃদ্ধি, এই তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কৃষি খাতে সরকারের এই নতুন পদক্ষেপকে বিশ্লেষকরা দেখছেন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে।
কারখানাটির উদ্বোধন করেন আফগান ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গণি বারাদার। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কারখানার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজন সম্ভব হবে। এর ফলে এলাকার অর্থনীতি সচল হবে, রপ্তানি মানসম্মত হবে এবং শত শত নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া অন্যান্য খাতের পাশাপাশি কৃষি খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প শুরু করা হয়েছে।”
কৃষিপণ্য রপ্তানি ও বাজার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে মোল্লা বারাদার জানান, “রপ্তানি সহজ করার জন্য দেশ-বিদেশের বাজারে নতুন সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। কৃষিপণ্যের প্রচারে বিভিন্ন প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্যের বিকল্প যেসব পণ্য আমদানি হয়, সেগুলোর ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দেশীয় কৃষিপণ্য ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। উন্নত সেচ ব্যবস্থা, হিমাগার, প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেজিং ঘর স্থাপনের দিকেও অগ্রগতি হয়েছে।”

রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের গুণগত মান ও আধুনিক প্যাকেজিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “এসব বিষয় আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
আঞ্চলিক সংযোগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে মোল্লা বারাদার বলেন, “ইমারাতে ইসলামিয়া বাণিজ্যের বিস্তারে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারে মনোযোগ দিয়েছে। বর্তমানে রেলপথ সম্প্রসারিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বহু দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন ও সম্প্রসারণ সম্ভব হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “লাজভরদ করিডোর সম্পূর্ণরূপে চালু করতে ইমারাতে ইসলামিয়া কাজ করছে। এ বিষয়ে ইকো সংস্থার সাম্প্রতিক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যাতে আফগানিস্তান ইউরোপের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে পারে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ব্যক্তিখাত ও বিনিয়োগকারীদের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, “দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে বেসরকারি খাত এবং বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছি।”
তিনি বলেন, “সব বিনিয়োগকারী কৃষি ও শিল্প ছাড়াও খনিজ, জ্বালানি, যোগাযোগ, পরিবহন ও সেবাখাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।”
মোল্লা বারাদার ‘আফগান সমন কিশমিশ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা’র উদ্যোক্তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমি তাদের বিনিয়োগ ও কার্যক্রম শুরুর জন্য স্বাগত জানাই এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। আমি অনুরোধ করছি, পরিমাণের চেয়ে গুণগত মান এবং মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেজিংকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।”
সূত্র : আরটিএ









