সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা আল জুলানী সরকারি সফরে রবিবার কুয়েত গিয়েছেন। তার সফর ঘিরে মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার সপ্তম আরব এবং নবম আন্তর্জাতিক সফর।
সফরের শুরুতে কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট আল-শারাআ এবং তার প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল-ইয়াহিয়া। সিরিয়ার প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শাইবানি এবং ঊর্ধ্বতন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা।
পরে বাইয়ান প্রাসাদে কুয়েতের আমির শেখ মিশআল আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন প্রেসিডেন্ট শারাআ। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রাউন প্রিন্স শেখ সাবাহ আল-খালেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ আহমাদ আল-আবদুল্লাহ এবং দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
আমিরি দিওয়ানের মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-মুবারাক আল-সাবাহ জানান, আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়, সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
১৯৬৩ সালের ২৪ অক্টোবর কুয়েত ও সিরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০১২ সালে সিরিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কুয়েত দামেস্কে দূতাবাস বন্ধ করে এবং কুয়েতি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।
১২ বছর পর, ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দামেস্ক সফরের মাধ্যমে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের দিকে বড় অগ্রগতি ঘটে। জিসিসি মন্ত্রীপরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুল্লাহ আল-ইয়াহিয়া প্রেসিডেন্ট আল-শারাআর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সংহতির বার্তা পৌঁছে দেন।
কুয়েতের আমির শেখ মিশআল সফরের দিনই সিরিয়ার জনগণের জন্য জরুরি খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের নির্দেশ দেন। এরই অংশ হিসেবে কুয়েত একটি মানবিক এয়ার ব্রিজ চালু করে, যার তত্ত্বাবধানে থাকে কুয়েত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হয়।
দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৬৯ সাল থেকে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সিরিয়ার পানি, পরিবহন, শিল্প ও জ্বালানি খাতে বহু প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছে।
সফরকালে প্রেসিডেন্ট শারাআ কুয়েতি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং অবকাঠামো, পর্যটন, জ্বালানি ও বন্দর খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের আহ্বান জানান।
১৯৯১ সালের কুয়েত যুদ্ধে সিরিয়া জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে সৈন্য পাঠিয়েছিল। বিপরীতে কুয়েত বহুবার গোলান মালভূমি ইস্যুতে সিরিয়ার ভূখণ্ডগত অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে।
২০১১ সালের সিরিয়া সংকটে কুয়েত জাতিসংঘে যুদ্ধাপরাধ বন্ধ, মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কুয়েত তিনটি আন্তর্জাতিক ডোনার সম্মেলনের আয়োজক ছিল এবং ২০১৬ সালে চতুর্থ সম্মেলনের সহ-সভাপতি হিসেবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কুয়েত দখলদার বাহিনীর সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের নিন্দা জানায়। একইভাবে ২০২৫ সালের ২ মে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের কাছে পরিচালিত বিমান হামলাকে তারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করে।
মে মাসে কুয়েত স্বাগত জানায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিরিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে।
সফরের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট শারাআ Bayan Palace-এ নিজ বাসভবনে কুয়েতের ফার্স্ট ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ আল-ইউসুফ সাউদ আল-সাবাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিদায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল-ইয়াহিয়াও।
এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুনভাবে শুরু হলো, ভ্রাতৃত্ব, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে।
সূত্র: কুয়েত নিউজ এজেন্সি-কুনা ও খালিজ টাইমস