জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বাজেটে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয় আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার (২ জুন) রাতে এক বিবৃতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, ‘পূর্বের বাজেটসমূহের ন্যায় এটি একটি গতানুগতিক বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটের সাথে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেটের মোটা দাগে খুব একটা তফাৎ পরিলক্ষিত হয়নি। এবার বাজেটে ব্যয় না বাড়লেও তেমন কোন ব্যয় কমেওনি, এতে কোন নতুনত্বের ছোঁয়াও পরিলক্ষিত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, এই বাজেটে বড় অঙ্কের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরেও এর কাছাকাছি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে আমরা মনে করছি।’
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট বাড়িয়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার একটি বড় অংশ আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পরোক্ষ কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ দেখা গেলেও প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পরোক্ষ কর বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষকে এর ভার বহন করতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্কখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এটিএম মা’ছুম বলেন, স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন এবং এলইডির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে সুতার আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় আরএমজি সেক্টরে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, এত বড় বাজেটে শিক্ষা সামগ্রীর দাম কমালেও শিক্ষা খাতে মোট বাজেট কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে উপকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, কৃষি কাজে ব্যবহৃত সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমানো হয়েছে যা আশাব্যঞ্জক। এছাড়াও কোল্ড স্টোরেজ খরচ কমানোর কারণে কৃষকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা প্রদান, সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে তা আরো বরাদ্দের দাবি রাখে। এক্ষেত্রে সুচিকিৎসা অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন। মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হলেও বাজেটে এ লক্ষ্য অর্জনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করা হয়নি, যা কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি করেছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ এবং অন্যান্য অবৈধ অর্থ উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার স্পষ্ট কোন পরিকল্পনা বাজেটে লক্ষ্য করা যায়নি, যা জাতিকে হতাশ করবে। এছাড়াও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই অপচেষ্টা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
তিনি ্া বলেন, আমি আশা করি সরকার কর্তৃক ঘোষিত বাজেটকে গণমুখী করার জন্য আয়কর আরও কমিয়ে এনে জনকল্যাণখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবেন। ঘোষিত বাজেট পর্যালোচনা করে আমরা এ সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য পরে জাতির সামনে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করবো।’