বৃহস্পতিবার | ৩ জুলাই | ২০২৫

গাজ্জা ও কাশ্মীরে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়: পাকিস্তান

spot_imgspot_img

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজ্জা ও দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরে মানবতাবিরোধী অপরাধ রোধে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে পাকিস্তান।

বুধবার (২ জুলাই) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের “রেসপনসিবিলিটি টু প্রোটেক্ট” (আরটুপি) বিষয়ক বিতর্ক অধিবেশনে বক্তৃতায় পাকিস্তানের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি উসমান জাদুন একথা বলেন।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজ্জা এবং ভারত দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ রোধে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গাজ্জা, দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীর ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের পরিস্থিতি দেখায় যে, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য, নীতিগত ও নিরপেক্ষ পন্থা গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।

গণহত্যা ও নৃশংসতা রোধ-প্রতিরোধে বৈশ্বিক অঙ্গীকার হিসেবে যেভাবে ‘আরটুপি’ নীতিকে তুলে ধরা হয়েছিল, তা আজ নির্বাচনমূলক প্রয়োগ, দ্বিমাত্রিক মানদণ্ড ও রাজনীতিকরণের কারণে অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে তিনি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০০৫ সালে অনুমোদিত ‘আরটুপি’ ধারণায় বলা হয়েছিলো যে, প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে তার জনগণকে রক্ষা করার। কিন্তু যখন কোনো রাষ্ট্র তা করতে ব্যর্থ হয় বা করতে চায় না, তখন নীতি অনুযায়ী সেই দায়িত্ব পালন ও অধিকার রক্ষা বর্তাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর। তাদের সেই দায়িত্ব পালন ও অধিকার রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে গিয়ে সহায়তা করতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে উপস্থাপিত সেই আরটুপি ধারণা বা নীতিটি এখন কার্যত পরিত্যক্ত। গাজ্জা এই নৈতিক দেউলিয়াপনার একটি প্রকট উদাহরণ। ইহুদিবাদী ইসরাইলের নির্মমতায় গাজ্জায় এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ১ লক্ষাধিক মানুষ। অপরদিকে দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরেও প্রায় ৯ লক্ষ ভারতীয় সেনা দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, টার্গেট করে করে গ্রেফতার এবং পরিকল্পিত বৈষম্য।

ঘৃণাভিত্তিক হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের উত্থান সংকটকে আরও গভীর করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এর ফলে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গণহত্যা-গণপিটুনির মতো সহিংসতা এবং প্রকাশ্য হত্যার হুমকির মুখে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহুবার এবিষয়ে সতর্কতা জারি করলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। অঞ্চলটিতে রাষ্ট্রীয় ও হিন্দুত্ববাদী নির্মমতা অব্যাহত রয়েছে।

আরটুপি বিতর্ক অধিবেশনের বক্তৃতায় জাতিসংঘের এই উপ-স্থায়ী সদস্য ৬ ও ৭ মে ভারতের উসকানিমূলক আগ্রাসনের কথাও তুলে ধরেন, যেখানে পাকিস্তানের বেসামরিক এলাকাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিলো দখলদার দেশটি। এতে ৩৫ জন বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি, যাদের মধ্যে ১৫ জনই ছিলো শিশু। এর জবাবে পাকিস্তান সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে বলে জানান এবং নিরীক্ষিত সামরিক লক্ষ্যবস্তুেই কেবল পাল্টা হামলা চালায় বলে উল্লেখ করেন।

পরিশেষে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধানে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে ও হচ্ছে। যদি আরটুপি নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে হয়, তবে অবশ্যই মানবিক মর্যাদা ও সুরক্ষার প্রতি প্রকৃত ও পক্ষপাতহীন অঙ্গীকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সূত্র: কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img