সোমবার | ৪ আগস্ট | ২০২৫
Newspaper Theme

Related Posts

তালেবান আসার পর মাঠে ফসল, গুদামে গম, খামারে গরু; একবছরের আফগান কৃষি সাফল্যের ফিরিস্তি

তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, অর্থনীতি ও জনসেবামূলক খাতে যে নতুন ধারার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কৃষি ও পশুপালন খাতে। ইসলামী শাসনব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থে আত্মনির্ভরতা, স্বদেশি উৎপাদন ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

বিশেষ করে যুদ্ধ-পরবর্তী একটি রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তানকে নতুনভাবে দাঁড় করাতে কৃষি, সেচ ও পশুপালন মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশজ অর্থায়নে শত শত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও গবেষণার বিকাশ ঘটেছে, নিশ্চিত হয়েছে কৃষক ও সাধারণ জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ।

কাবুলে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষি, সেচ ও পশুপালন মন্ত্রণালয় তাদের বার্ষিক কার্যক্রম ও চলতি বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও পশুপালন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মাওলানা সদরআজম উসমানী, সেচ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক উপমন্ত্রী মাওলানা বাজ মুহাম্মাদ ফাইজান, আর্থিক ও প্রশাসনিক উপমন্ত্রী মাওলানা আগা জান আখুন্দ (হাজী সালেম) এবং ভূমি পুনর্বাসন ও পুনঃবরাদ্দ বিভাগের মহাপরিচালক মাওলানা আব্দুল আলী উমরী।

সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে মাওলানা সদরআজম উসমানী বলেন, “গত এক বছরে আমরা কৃষি, পশুপালন, সেচ, প্রাকৃতিক সম্পদ, বন সংরক্ষণ, গবেষণা, মাদক চাষ প্রতিরোধ, গ্রীনহাউস ও পানি সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ, শস্য ও পশুর রোগ প্রতিরোধ, ল্যাবরেটরি উন্নয়ন, সার ও বীজ বিতরণ এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বহু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের লক্ষ্য কৃষক ও পশুপালকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতা অর্জন। প্রবাসী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা রয়েছে, আপনারা নিজ দেশে বিনিয়োগ করুন।”

মাওলানা বাজ মুহাম্মাদ ফাইজান জানান, বন সংরক্ষণ ও পুনঃবনায়ন, চেকড্যাম নির্মাণ, বন উজাড় ও কাঠ পাচার প্রতিরোধ, অনাবাদি জমি ড্রেনেজ, চরাঞ্চল ও সংরক্ষিত এলাকার জরিপ, সেচ খাল সংস্কার-নির্মাণ এবং কোল্ড স্টোর ও গুদাম তৈরিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মাওলানা আগা জান আখুন্দ (হাজী সালেম) বলেন, গম সংগ্রহ, কৃষিপণ্য থেকে উশর আদায়, আয়ের উৎস বৃদ্ধি, গম মজুদ, তরুণ নিয়োগ ও দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং জনগণকে দেশের পুনর্গঠনে অংশ নিতে আহ্বান জানান।

মাওলানা আব্দুল আলী উমরী জানান, লক্ষ লক্ষ জেরিব দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধার, হাজার হাজার জেরিব জমি বিনিয়োগকারীদের ইজারা, এমারাতি সংস্থাগুলোর কাছে জমি হস্তান্তর, নতুন ৩০টি জেলার জন্য জমি বরাদ্দ এবং ২৫০টির বেশি জমি-বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পন্ন হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গত বছর দেশের ৩৪ প্রদেশে ৭৬৩ মিলিয়ন ৬৫৬ হাজার ৬০৪ মার্কিন ডলার ব্যয়ে ৩৯০ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ১ ৩৯৮ টি গবেষণার মাধ্যমে প্রায় ৪০ টি নতুন ও উন্নত জাত কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতেই ৭০ ১৪১ মেট্রিক টন গম বিতরণ, কৃষকদের কাছ থেকে ৩৬ ২০০ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ, ৩২৫ জেরিব নতুন বাগান, ৪৯ টি গ্রীনহাউস, ১ ২১০ টি প্রদর্শনী খণ্ড, ৭৬ হাজার পশুরোগ নির্ণয়, ২০ মিলিয়নের বেশি পশুর চিকিৎসা, ৭৫ হাজার মেট্রিক টন উন্নত বীজ-সার বিতরণ, আধুনিক কোল্ড স্টোর নির্মাণ-সংস্কার এবং ৪০৫ হাজার গাভীর কৃত্রিম প্রজনন সম্পন্ন হয়েছে।

শেষে সাংবাদিকেরা গম-স্বনির্ভরতা, কোল্ড স্টোর, মাদক-চাষের বিকল্প, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাঁধ ও সেচ প্রকল্প, বন উজাড় প্রতিরোধ নিয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিস্তারিত জবাব দেন।

সূত্র : আরটিএ

Latest Posts