মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

বিদ্যুতে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে, ভর্তুকির টাকায় ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি হচ্ছে : আল্লামা কাসেমী

spot_imgspot_img

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতে একদিকে রাষ্ট্রীয় অর্থের বিপুল অপচয়, অনিয়ম চলছে, অন্যদিকে উচ্চমূল্য ও ভৌতিক বিলের কারণে গ্রাহক ভোগান্তিও চরমে গিয়ে ঠেকেছে। জনগণের কাছে সংশ্লিষ্টদের জবাবদেহিতা উপেক্ষিত থাকায় এই খাতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দিন দিন বাড়ছেই।

আজ (৫ জুন) শুক্রবার এক বিবৃতিতে জমিয়ত মহাসচিব বলেন, দেশে অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র অহেতুক বসিয়ে রাখার কারণে প্রতি বছর কেন্দ্রভাড়া বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খাত থেকে। মূলত: বেসরকারী খাতে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিযোগিতাহীন দরপত্রে বহুবিধ অন্যায় সুবিধাদান, দায়মুক্তি ও চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় এই অনাকাঙ্খিত জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্যমতে দেশে সরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে বেসরকারীভাবে যে পরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, তার ৫৭ ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোন কার্যক্রমই নেই। বিগত অর্থ বছরে এসব অলস বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী সচল কেন্দ্রসমূহে ব্যবহৃত তেল, গ্যাস, কয়লা’সহ জ্বালানির মূল্য দিতে হয় পিডিবিকে। আর এই কয়লা, তেল ও এলএনজি আমদানি হয় বেসরকারী খাতের মাধ্যমে। এতেও ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্য আদায় করে পিডিবি থেকে। সারা বছর কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকে। এরপর উৎপাদিত বিদ্যুতের উপর মূল্য ধার্য হয়। ফলে বিদ্যুৎখাতের অযৌক্তিক সকল ব্যয়ভার জনগণের কাঁধেই ওঠছে। এভাবে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকির নামে জাতীয় অর্থনীতি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকায় ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি হচ্ছে।

তিনি বলেন, একদিকে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস থাকা সত্ত্বেও নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেমে নেই। অন্যদিকে রাজধানী ও কয়েকটা মহানগরী বাদে মফস্বলের জেলা ও গ্রামীণ পর্যায়ে সমানে লোড শেডিং চলছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল আশংকাজনকহারে বাড়ছে। অনেক পরিবারের অভিযোগ, ঘরে অল্প কয়েকটা লাইট-ফ্যান। কিন্তু মাস শেষে বিল আসছে দেড়, দুই হাজার বা তারও বেশি টাকা। অভিযোগ করলেও প্রত্যাশিত কোন সমাধান মিলছে না। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা যেনো পাহাড়ের মতো জেঁকে বসেছে।

আল্লামা কাসেমী বলেন, জ্বালানী ও বিদ্যুৎখাত শতভাগ সরকারী নিয়ন্ত্রণে থাকা অপরিহার্য ছিল। অনিয়ম বন্ধ ও সরকারী সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিয়ে তড়িগড়ি বিদ্যুৎখাতে বিপুল বেসরকারী অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়াটাই ছিল জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী। তখনও এই নিয়ে ব্যাপক কথা উঠেছিল, সরকার তাতে কান দেয়নি। এতে বিদ্যুৎ সঙ্কট সমাধানের দৃশ্যমান প্রয়োজনের আড়ালে কার্যত: ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও ব্যবসায়িদের স্বার্থকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে কার্যকর সমাধান এবং জনস্বার্থ বরাবর উপেক্ষিতই থেকে গেছে।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিদ্যুৎখাতকে ব্যবসায়িক বৃত্ত থেকে বের করে আনতে হবে। অন্যথায় বিদ্যুৎ খাতের এই বিপুল ব্যয়ভার জাতীয় অর্থনীতিতেই কেবল বিরূপ প্রভাব ফেলবে না, বরং জনদুর্ভোগ ও শোষণের বিশাল কারণ হয়ে দেখা দেবে।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img