আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজ্জার জনগণকে হুমকি দিয়েছিলেন যে, যদি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে গাজ্জায় নরকীয় কাণ্ড ঘটনাবেন। কিন্তু ট্রাম্পের এমন হুমকিকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না গাজ্জাবাসী।
গাজ্জাবাসী বলছেন, তাদের নতুন করে হারানোর কিছু নেই।
বুধবার (৫ মার্চ) রাতে ট্রাম্প এমন হুমকি দেন।
ইয়াসির আল-শারাফা (৫৯) নামে গাজ্জার একজন ব্যবসায়ী আল-জাজিরাকে বলেন, আমি এসব হুমকিকে ভয় পাই না। কারণ গাজ্জার অনেক মানুষের মতো আমিও বিশ্বাস করি- আমার হারানোর কিছুই নেই।
তিনি বলেন, আগে পোশাক ব্যবসায়ী ছিলাম। আমার একটি বড় দোকান, ছয়তলা একটি ভবন, একটি গাড়ি, এবং গাজ্জা সিটির তেল আল-হাওয়ায় স্টক রাখার জন্য গুদাম ছিল। বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রম এসব করেছিলাম। এখন ধ্বংস হয়ে গেছে, যুদ্ধ সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। যেদিকেই তাকাই, কেবল ধ্বংস, ধ্বংসাবশেষ আর দুর্দশা। আমাদের শোক করার মতো আর কিছু বাকি আছে কি? আমি এখন শিশুদের জন্য ক্যান্ডি ও স্ন্যাকস বিক্রি করি।
তিনি আরও বলেন, যদি আমরা বন্দিদের হস্তান্তর করি, তবুও কিছুই বদলাবে না। তারা নতুন অজুহাত তৈরি করে যে কোনো সময় যুদ্ধ শুরু করতে পারে আবার। আমরা পুরো বিশ্ব থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।
জামিলা মাহমুদ (৬২) নামে একজন গাজ্জা বাসিন্দা বলেন, ট্রাম্পের হুমকিগুলো একটি মানসিক যুদ্ধের অংশ; যার উদ্দেশ্য গাজ্জার মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। না আছে ইন্টারনেট, না বিদ্যুৎ, না কোনো যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিবারই একটা নতুন পরিকল্পনা আসে– কখনো বলে গাজ্জার মানুষকে জোর করে সরিয়ে দেবে, কখনো বলে ইসরাইল পুরো গাজ্জা দখল নেবে। আর এখন তারা পুরো গাজ্জার জনগণকে বন্দিদের কারণে হুমকি দিচ্ছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, যা কিছু ঘটুক না কেন, তিনি কখনোই গাজ্জা ছেড়ে যাবেন না। আমার বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আমাকে সরাতে পারবে না।
আইমান আবু দাইয়েহ (৬০) একজন গাজ্জার বাসিন্দা বলেন, হামাস এখন জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিক – একটি চুক্তি গ্রহণ করুক, আলোচনা করুক, এবং বন্দিদের হস্তান্তর করুক, যাতে এই অন্তহীন দুঃস্বপ্ন শেষ হয়। আমাদের অবস্থান দুর্বল, আর কেউ আমাদের পাশে নেই।
তিনি বলেন, মরা ৫০ হাজার মানুষ হারিয়েছি। আমার দুই ছেলে মারা গেছে– একজন ২০২৩ সালের অক্টোবরে, আরেকজন ডিসেম্বর। তারা দুজনই তরুণ ছিল। আমার বাড়িটিও ধ্বংস হয়েছে। আমরা যথেষ্ট ক্ষতি ও দুর্ভোগ সহ্য করেছি। আমাদের বিষয়ে আরব দেশগুলো নীরব, ইউরোপের দেশগুলোও নীরব।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের কোনো মূল্য নেই। আমার মনে হয়, সে শুধু হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এসব হুমকি দিচ্ছে। তাদের যা করার বাকি, তা হলো আমাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।
সূত্র: আল-জাজিরা।