মঙ্গলবার, জুন ২৪, ২০২৫

রাজধানী জুড়ে ডাকাতের উৎপাত; নেপথ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা

spot_imgspot_img

রাজধানী জুড়ে রাতভর ভাড়াটে ডাকাতের উৎপাত শুরু হয়েছে। মিরপুর পল্লবী এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পরে বেশ কয়েকজন ডাকাত। পরে এলাকাবাসীর মারধরের সময় তারা (ডাকাত) জানায়, আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের এ কাজে নামিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর পুলিশের সঙ্গে আরও বেশি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে বহু হতাহতের ঘটনাও ঘটে। হামলা হতে পারে এই ভয়ে পুলিশ সদস্যরা থানায় তালা মেরে পালিয়ে থাকায় বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী শুরু হয়েছে নৈরাজ্য, লুটপাট আর ডাকাতি।

বুধবার (৭ আগষ্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

ইসিবি এলাকার বাসিন্দা মেরিনা মিতু নামে একজন বলেন, আমাদের ইসিবি এলাকায় রাত নয়টার দিকে ২০০/৩০০ ডাকাত এক সাথে ৭০টি ভবনে ঢুকেছিল। ঢুকেই তারা এলোপাতাড়ি কোপ দিতে শুরু করে। এসময় রাস্তায় খেলতে থাকা দুটি বাচ্চা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। পরে আমরা এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া করে সব এক্সিট গেটে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও দিয়ে অনেককে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে এরা স্বীকার করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার হয়ে টাকার বিনিময়ে এই ডাকাতি, তাণ্ডব করতে আসছে এরা। তারা কালশি বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। রাত তিনটার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আরশিনগর, আটিবাজার, নয়াবাজার, বসিলা, বসিলা মেট্রো হাউজিং, মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, জিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ এলাকা, শনিরআখড়া, মিরপুরের পল্লবী, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর এলাকা, উত্তরার ৮-৯, ১০-১১ নম্বর সেক্টর, গাজীপুর ও টঙ্গী কলেজ রোড এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং রাজশাহী মিলে প্রায় ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী এলাকার অধিকাংশ মানুষ জানিয়েছেন, যারা ডাকাতি করতে এসেছিল বেশিরভাগ টোকাই এবং উঠতি তরুণ। তাদেরকে অস্ত্র এবং টাকা সরবরাহ করে পরিকল্পিতভাবে এসব করানো হচ্ছে। যাতে দেশে কেয়ারটেকার সরকার শপথ নিতে না পারে এবং সেই সুযোগে দেশে সেনা শাসন আসে। মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরিতেই সারাদেশে একযোগে এই ডাকাতি চলছে বলে মনে করছেন তারা। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আটকরা জানিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশে ডাকাতিতে নেমেছেন।

স্থানীয়রা জানান, এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে সতর্ক করা হয়। পরে লোকজন লাঠিসোটা ও যার যা অস্ত্র ছিল তা নিয়েই রাস্তায় বেরিয়ে আসেন এবং তাদের ধাওয়া করেন। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাত সদস্যরা আটকও হয়েছেন। তবে এই অবস্থা কতদিন ধরে চলবে তারা তা জানেন না। বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসি-তামাশাও করছেন। তবে কেউ কেউ ডাকাতির প্রমাণস্বরূপ এলাকায় ডাকাতদের ধাওয়া দেওয়া ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এমন ঘটনার পরও ফেসবুকে একটি গোষ্ঠী ডাকাতের এই ঘটনাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার রাত নয়টার দিকে মিরপুরের ইসিবি চত্বরের একটি টাওয়ারে ঢুকে শতাধিক যুবক। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এসময় তারা ৭০টি ভবনে ঢুকে পড়ে ও ভবনগুলোর বাসিন্দাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি শুরু করে। খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তারা এলাকার সব গেট বন্ধ করে দেন। এরপর ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে ফেলেন। এ সময় গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তার নাম পরিচয় কেউ জানাতে পারেনি। পরে এলাকাবাসী দু’জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন। তার আগে এলাকাবাসী বেধড়ক গণপিটুনি দেয় তাদের। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী।

আরও জানা গেছে, তার আগে সেনাবাহিনীর কয়েক প্লাটুন সদস্য এসে ভবনগুলো ঘেরাও করে। তারা ভবনগুলোতে ঢুকে পড়া ডাকাত সদস্যদের উদ্দেশ্যে হ্যান্ড মাইক দিয়ে বলতে থাকেন তারা যদি বের না হয়ে আসে তবে তারা ভেতরে প্রবেশ করে গুলি চালাতে বাধ্য থাকবে। এমন কথা শোনার পর ডাকাত সদস্যরা চুপ করে থাকলে সেনাবাহিনী গুলি করতে বাধ্য হয়। পরে তারা আসার চেষ্টা করলে জনগণ তাদের ধরে গণধোলাই দেন এবং ১৭ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন তারা। আটকরা সবাই টোকাই বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। প্রায় ঘণ্টা ধরে এই অভিযান চলে। তাদের ধরতে ৭০টি ভবনের প্রতিটিতে ঢুকে পড়েন সেনারা। তখন বাইরে সাইরেন বাজছিল। পরে আরও কয়েকটি গাড়ি আসে।

ডাকাতির এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছেন। শুধু তাই নয় তারা এলাকাবাসীর মাঝে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে খুব সহজে কল করলে ছুটে যেতে পারেন। এমন সংক্রান্ত কমিটি করা হয়েছে মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, বসিলা এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায়।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তারা নিজ উদ্যোগে এই কাজটি করছেন। যতক্ষণ না থানায় পুলিশ ফেরে ততক্ষণ তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিবেশ তৈরি করে জনমনে অশান্তি তৈরির জন্যই একটি চক্র এমন করছে বলে মনে করেন তারা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি হচ্ছে। বুধবার বিষয়টি নিয়ে সদর দফতরে পুলিশের নতুন আইজি মইনুল ইসলামকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তিনি এ বিষয়ে কোনও কথা বলেননি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যে সকল সদস্য কর্মস্থল থেকে দূরে আছেন তাদেরকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বুধবার আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জান-মাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। যেকোনও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img