সোমবার, জুন ৯, ২০২৫

বিদেশি যোদ্ধারা কি সিরিয়ার নাগরিকত্ব পাবেন? কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট আল-জুলানী?

spot_imgspot_img

বিদেশি যোদ্ধাদের অবস্থান নিয়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তীব্র বিতর্ক চলছে, এমন বাস্তবতায় প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাআ আল-জুলানীকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে স্পর্শকাতর ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জ।

মার্কিন আমেরিকাভিত্তিক দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে জানিয়েছে, সিরিয়ায় যে হাজারো বিদেশি যোদ্ধা বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পক্ষে যুদ্ধ করেছে, তাদের নিয়ে এখনো গভীর বিতর্ক বিরাজ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার নতুন প্রশাসন এদেরকে “অস্ত্রের সাথী” এবং “বিপ্লবের প্রতি বিশ্বস্ত” হিসেবে বিবেচনা করলেও, আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো এদের উপস্থিতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে অতীতের ‘আইএস’ অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে, অনেক দেশ এই বিদেশি যোদ্ধাদের সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখছে।

২০১১ সালে সিরিয়ায় বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ উত্তর ও পূর্ব সিরিয়ার বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে যোগ দেন এবং সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আহমাদ হুসাইন আল-শারাআ আল-জুলানীর এখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হলো, তাদের যারা দীর্ঘদিন ধরে বিপ্লবের পক্ষে লড়েছে, তাদের সমর্থন বজায় রাখা এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মিত্রদের উদ্বেগ দূর করা।

আমেরিকা, যারা বর্তমানে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা কমানোর বিষয়ে চিন্তা করছে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খুঁজছে, তারাও একাধিকবার এই বিদেশি যোদ্ধাদের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, অনেক বিদেশি যোদ্ধা জানিয়েছেন যে, তারা আইনি ঝুঁকি ও কারাবন্দির আশঙ্কায় নিজেদের দেশে ফিরতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ সিরিয়ায় পরিবার গঠন করেছেন, যার ফলে এখান থেকে চলে যাওয়া আরও কঠিন।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে একজন মিশরীয় যোদ্ধার কথা, যিনি ইদলিব অঞ্চলে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, “এটাই এখন আমার ঘর, আমি আর কোথাও যেতে পারবো না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি মিশরে ফিরলে গ্রেফতার হবো। আমার সন্তানদের কী হবে তখন?”

আরেকজন, দাগিস্তান থেকে আসা ৩৬ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ আবরিক বলেন, “শারাআ আমাদের ছেড়ে দেবেন, এটা কল্পনাও করা যায় না। আমরা তাঁর সামনে, পেছনে ও পাশে দাঁড়িয়েছি।” বর্তমানে তিনি আমদানির ব্যবসা শুরু করেছেন এবং সিরিয়ার নাগরিকত্ব পেতে চান।

৩৯ বছর বয়সী ইসলাম শখ্বনোভ, যিনি ২০১৫ সালে দাগিস্তান থেকে সিরিয়ায় এসে বিদ্রোহে যোগ দেন, তিনি বলেন, “যদি সরকার ও আসাদের বাকি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়, আমি অবশ্যই আমার দেশ রক্ষা করবো।” তবে তিনি নিশ্চিত নন যে তিনি সরকারিভাবে সৈন্যদলে যোগ দেবেন কিনা।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ার বর্তমান সরকার এখন কিছু বিদেশি যোদ্ধাকে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থানরত বিদেশি যোদ্ধার সংখ্যা আনুমানিক ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ এর মধ্যে। এদের মধ্যে অধিকাংশই উইঘুর মুসলিম এবং রাশিয়া ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের নাগরিক।

গত এপ্রিল মাসে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট আল-শারাআ আল-জুলানী বলেন, “যেসব বিদেশি যোদ্ধা বিপ্লবের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং বহু বছর ধরে সিরিয়ায় বাস করছেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যতক্ষণ তারা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয় এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও আইন সম্মান করে চলে, ততক্ষণ এ বিষয়টি জরুরি কিছু নয়।”

সম্প্রতি আমেরিকা একটি পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে, যেখানে সিরিয়ার নতুন সরকার প্রায় ৩,৫০০ বিদেশি যোদ্ধাকে ‘সিরিয়ান আর্মি’র ৮৪তম ডিভিশনে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে আমেরিকা সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলতে এই যোদ্ধাদের বহিষ্কারকে অন্যতম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছিল।

রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত থমাস বারাক বলেন, “আমেরিকা ও সিরিয়ার মধ্যে এ বিষয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও স্বচ্ছতা রয়েছে। বেশিরভাগ যোদ্ধা উইঘুর এবং প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আগত।”

সূত্র: আল জাজিরা

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img