কাশ্মীর সংকট নিরসনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এমন কিছু মানুষকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন, যেটা কেউ কল্পনাও করেনি। তাই এটা অবাক করার মতো নয় যে, উনি এমন একটি বিষয়ও সামাল দিতে চাইবেন।”
তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টা সবসময়ই গভীরভাবে প্রোথিত বৈশ্বিক সংকটগুলোর সমাধানের দিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়।”
প্রেসিডেন্ট ভবিষ্যতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রস্তাবে সমর্থন দেবেন কি না, কিংবা ভারত-পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করবেন কি না, এমন প্রশ্নে ব্রুস সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেন, “কিন্তু দুনিয়া জানে উনার স্বভাব কী। এটা এক উত্তেজনাপূর্ণ সময়… এবং আমি আশাবাদী যে, প্রেসিডেন্ট (নিজের মেয়াদের মধ্যে) হয়তো এমন কিছু সমাধান করে যেতে পারবেন।”
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানান, পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে এসে আমেরিকার আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যালিসন হুকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধবিরতিতে আমেরিকার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
ব্রুস বলেন, “আপনারা যেমন কল্পনা করতে পারেন, ধন্যবাদ ঈশ্বরকে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার চলমান যুদ্ধবিরতিতে আমেরিকার সমর্থন পুনরায় তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যেও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।”
৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলটি ওয়াশিংটনে অবস্থান করে। এ সময় তারা ডজনখানেক আমেরিকান আইনপ্রণেতা এবং সিনিয়র স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে। সফরের সময় বিলাওয়াল ভুট্টো ভারতীয় সামরিক তৎপরতা, আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত হওয়া নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি একই সময়ে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিল ভারতীয় পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন। আমেরিকার ডেপুটি সেক্রেটারি লানডাউ ওই দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারে ভারতের প্রতি আমেরিকার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
গত মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সামরিক উত্তেজনার পর আমেরিকা ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। পরে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “আমি তোমাদের সঙ্গে কাজ করব, দু’পক্ষের সঙ্গেই, যাতে ‘এক হাজার বছর’ পর হলেও কাশ্মীর বিষয়ে একটা সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়।”
এই প্রস্তাবকে পাকিস্তান স্বাগত জানালেও ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, কাশ্মীর পুরোপুরি একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং এর কোনো তৃতীয় পক্ষীয় হস্তক্ষেপ তারা গ্রহণ করবে না।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি আহ্বান জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেন সক্রিয়ভাবে ভারতকে আলোচনার টেবিলে আনতে ভূমিকা রাখেন।
তিনি বলেন, “যদিও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী, তবুও কার্যকর ও অর্থবহ সংলাপের মূল বিষয়বস্তু হতে হবে কাশ্মীর সংকট।”
সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্টজের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের নেতৃত্ব খুব শক্তিশালী। কিছু মানুষ হয়তো আমার কথায় খুশি হবে না, কিন্তু ব্যাপারটা যেমন আছে, আমি তেমনই বলছি।”
তিনি দাবি করেন, তাঁর কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই এই সংকট প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন