শুক্রবার, জুন ১৩, ২০২৫

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন ড. ইউনূস, সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

spot_imgspot_img

লন্ডনে সফররত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাচার হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার উদ্ধারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যে অনুরোধ জানিয়েছেন, সেটি এখনও পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য এই অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চাওয়া হলেও স্টারমার এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যার বড় অংশ বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আছে। বাংলাদেশের নতুন সরকার এই ‘চুরি হওয়া’ অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাজ্যের নৈতিক ও আইনি সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। ইউনূস আরও বলেন, “এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং যুক্তরাজ্যেরও নৈতিক দায়িত্ব যে এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।”

তবে যুক্তরাজ্যের সরকারি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষাতের পরিকল্পনা নেই। যদিও কিছু সরকারি বিভাগের পক্ষ থেকে সীমিত সহযোগিতা এসেছে, ইউনূস মনে করেন এর চেয়ে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর উদ্যোগ দরকার। তার মতে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা একটি আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব, যা যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

অন্যদিকে, এসব অভিযোগের জেরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ ছাড়তে বাধ্য হন লেবার পার্টির এমপি ও শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে অবৈধ সম্পদ গ্রহণের বিষয়টি। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কিছু বিষয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থাকায় তা মিটমাট করতে চান। তবে অধ্যাপক ইউনূস এই সাক্ষাতের প্রস্তাবে রাজি নন। তিনি বলেন, “এটি একটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ এবং এতে ব্যক্তিগত যুক্ত হওয়ার সুযোগ আমার নেই।”

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দৃঢ় ভাষায় বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং তা সম্পদের উৎসে রূপান্তরিত হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অর্থনৈতিকভাবে লুফে নেয়া হয়েছে, যা বড় ধরনের পাচারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও জানান, পাচার হওয়া এই অর্থের গন্তব্য শুধু যুক্তরাজ্য নয়, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও মধ্যপ্রাচ্যেও রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিক দেশে অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক মহল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের গ্রেট ব্রিটেনের জনগণের সহায়তা প্রয়োজন, কারণ এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, একটি ন্যায় বিচার ও আন্তর্জাতিক নৈতিকতার বিষয়।”

এই সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে আরও উদ্যমী ও ফলপ্রসূ সহায়তা পাওয়া, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img