ভারতের বিহারের নালন্দা জেলায় মোহাম্মাদ আতহার হুসাইন (৪০) নামে এক মুসলিম কাপড় বিক্রেতাকে ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নওদা জেলার রোহ থানা এলাকায় তাকে মারধর করে হিন্দুত্বাবাদীরা। পরে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মৃত্যুর আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে হুসাইন জানান, চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তি তাকে রাস্তায় থামিয়ে প্রথমে পকেট তল্লাশি করে। এরপর তাকে জোর করে একটি ঘরের ভেতরে টেনে নেওয়া হয় এবং তার মুসলিম পরিচয় প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর হামলাকারীরা লোহার রড দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। তারা তার আঙুল ভেঙে দেয়, বুকের উপর পা দিয়ে লাত্থি মারে, প্লায়ার (চিম্টা) দিয়ে তার হাত-পা ও কান চেপে ধরে পিষে ফেলে। ইট দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোরও চেষ্টা করা হয়।
একাধিক গণমাধ্যমের কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার ধর্ম নিশ্চিত করতে তারা তার প্যান্ট খুলে দেখার চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় হুসাইনের স্ত্রী শাবনাম পারভিন থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সোনু কুমার, রঞ্জন কুমার, শচীন কুমার ও শ্রী কুমার। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রোহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসএইচও) জানান, ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীর অধীনে বিহারের আইনশৃঙ্ঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এই ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মোহাম্মাদ আতহার হুসাইন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি গ্রামীণ নওদা এলাকায় কাপড় বিক্রি করে আসছিলেন। এতদিন তার ব্যবসা বা চলাফেরায় কোনো সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে নওদা জেলায় এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া আগস্ট মাসে ডাইনি অপবাদের জেরে এক বৃদ্ধ দম্পতির ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।
সূত্র: মুসলিম মিরর










