বাঙালী মুসলিম বিদ্বেষের জেরে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা ৪ ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে ভারত
সোমবার (১৬ জুন) মুসলিম মিররের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে জানানো হয়, বাংলাদেশী মুসলিম, শুধুমাত্র এই সন্দেহের ভিত্তিতে নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশে পুশব্যাক বা জোরপূর্বক বিতাড়িত করা ৪ ভারতীয়কে দেশে ফিরে নিয়েছে ভারত।
ওই ব্যক্তিরা হলেন, মুর্শিদাবাদের ভগবাঙ্গোলার মাহবুব শেখ, হরিহরপাড়ার নাজিমুদ্দিন মন্ডল এবং বেলডাঙার মিনারুল শেখ। অপরজন হলেন, বর্ধমানের মণ্টেশ্বর, মনসাদের মোস্তাফা কামাল শেখ।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এই ৪জনের প্রত্যেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশী মুসলিম এই সন্দেহে মুম্বাই থেকে আটক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই শিলিগুড়িতে বিএসএফ মারফত জোরপূর্বক বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
জোরপূর্বক বাংলাদেশে বিতাড়নের খবর পাওয়ার পর তাদের পরিবার মুর্শিদাবাদে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে। স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ পেলে পুলিশ তাদ্রর প্রয়োজনীয় সরকারী নথি ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। এসব বিএসএফের কাছে জমা দেওয়া হলে তারা তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এর সাথে জরুরী পতাকা বৈঠক করে। বিজিবির সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই ৪ ভারতীয়কে ভারতে ফিরিয়ে নেয়।
ভারতের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পন্ন করা হলে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাহবুব শেখ, নাজিমুদ্দিন মন্ডল, মিনারুল শেখ ও মোস্তাফা কামাল শেখ নামের এই ৪ ভারতীয়কে কোচবিহারে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করে।
মাহবুব শেখ জানান, তিনি পুশব্যাকের শিকার হওয়ার আগে প্রশাসনকে তার বৈধ নাগরিকত্বের কাগজপত্র দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও তাকে জোরপূর্বক ভারত থেকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশের সীমানায় ফেলে আসা হয়।
উল্লেখ্য, মে মাসে দখলকৃত কাশ্মীরে প্রশ্নবিদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে “অপারেশন সিঁদুর” নামে সামরিক অভিযান শুরু করে। যেখানে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধবিমান থাকা সত্ত্বেও ভারতের ভরাডুবি ঘটে।
মূলত মে মাসের প্রশ্নবিদ্ধ সন্ত্রাসী হামলাকে অজুহাত বানিয়ে দেশটির উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের মুসলিম বিদ্বেষী কাজকর্মকে জোরদার করে। মুসলিম বিতাড়ন, মুসলিমদের মসজিদ-মাদরাসা ও ঘরবাড়ি ধ্বংস বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অননুমোদিত অভিবাসী বহিষ্কারের নামে ভারতজুড়ে বিশেষত বাঙালী মুসলিমদের দেশ ছাড়া করার পঁয়তারা শুরু করে। গত এক মাসেই ২ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে শুধুমাত্র সন্দেহের জেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মুম্বাই ও নয়াদিল্লি থেকে যাদের আটক করা হয় তাদের মধ্যে অনেককে অমানবিক ও অবৈধভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র জলসীমায় ফেলে আসা হয়, যা জাতিসংঘ সহ বিশ্বজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়।
এছাড়া গত ৮ মে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানায়, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুশ ইন করা কমপক্ষে ১২৩ জন ব্যক্তিকে আটক করেছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর পুশ ইন করা ব্যক্তির সংখ্যা ৭৮ জন। যাদের মধ্যে আবার ৩ জন ভারতের নাগরিক। তাদের নাগরিক হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।