ব্রিটেনসহ ইসরাইলপন্থী পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারদের কঠোর সমালোচনা করেছেন স্কটল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামজা ইউসুফ।
সোমবার (২৩ জুন) আনাদোলুর খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, ব্রিটেনসহ ইসরাইলপন্থী পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারদের দ্বিচারিতার কঠোর সমালোচনা করেছেন স্কটল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামজা ইউসুফ।
স্কটল্যান্ডের ইতিহাসের এই সাবেক প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী ইরানে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের হামলাকে অবৈধ আখ্যা দেন। ব্রিটেনসহ যেসব পশ্চিমা সরকার ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে দাঁড়ায় কিন্তু ইরানের উপর হামলা হওয়ার পর তাদের পাল্টা প্রতিক্রিয়াকে ন্যায্য বলে স্বীকার করে না তাদের কঠোর সমালোচনা করেন এবং নিন্দা জানান।
আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানান। ইসরাইল গত ১৩ জুন ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালানোর কারণে দেশটি জবাবে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে বাধ্য হয় বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমরা আবার পশ্চিমা সরকারগুলোর দ্বিমুখী আচরণ দেখছি। তারা এখন ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু ইরান যখন আক্রান্ত হয় তখন তাদের আত্মরক্ষার অধিকারের আলাপ কোথায় যায়?
ইরানকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শন ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আইএইএর রিপোর্ট অনুসারে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। সুতরাং পারমাণবিক আক্রমণের তাৎক্ষণিক কোনো আশঙ্কা ও হুমকি নেই। তাই ইরানে ইসরাইলের হামলা অবৈধ। প্রতিটি সরকারকে এর নিন্দা করতে হবে।
তিনি ব্রিটেন কর্তৃক ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত একজনের নেতৃত্বে থাকা সরকারকে ব্রিটেনের সরকার এখনো অস্ত্র সরবরাহ করছে, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অপরাধী সরকারটির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের সবাইকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।
ব্রিটেনের ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদী সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার। একটি প্রতিবাদী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, অথচ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত, তাকে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না! তিনি কেনো আমাদের সন্ত্রাসী তালিকায় নেই? এটি প্রকৃতপক্ষে ব্রিটেন সরকারের দ্বিমুখী নীতির ও ভণ্ডামির একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ব্রিটিশ সরকার শীগ্রই ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে, যার ফলে সংগঠনটিকে কার্যত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
এই পদক্ষেপ আসে সেই ঘটনার পর, যখন গত শুক্রবার সকালের দিকে অ্যাকশন গ্রুপের কর্মীরা অক্সফোর্ডশায়ারে অবস্থিত আরএএফ ব্রাইজ নর্টন বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে এবং দু’টি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত করে। মূলত গাজ্জায় ইসরাইলের হামলা ও তাতে ব্রিটেনের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তারা এমনটি করেছিলো বলে জানানো হয়।
এই প্রসঙ্গে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ঘাঁটি থেকে প্রতিদিনই ব্রিটিশ বিমান গ্রিক সাইপ্রাসের আরএএফ আকরোতিরিতে যায়। সেখান থেকে তারা ইসরাইলের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুদ্ধবিমানে জ্বালানি দেয় এবং গাজ্জায় গণহত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের সংগঠনটি ইসরাইলে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী ব্রিটেনের অস্ত্র কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদী ও প্রতিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিচিত। বিশেষত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজ্জায় ইসরাইলী গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে।