অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে চার রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি ইতালি, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান ও কসোভোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান উপদেষ্টা ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনে ইতালি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক এই দেশগুলোর সঙ্গে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
দিনের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে একটি হোটেলে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মাঝে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভজোস্যা ওসমানির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
শফিকুল আলম বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রাণহানিতে সমবেদনা জানিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে শাহবাজ শরীফ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ ধরনের বিপর্যয়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসময় তিনি ১১টি কমিশনের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাংলাদেশকে অর্থবহ রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রতিটি বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সম্পর্কেও আলোচনা হয়। তিনি বলেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে অনুরোধ করলে তিনি ইতালি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনে ইতালি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। তবে এই বৈঠকে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল নিরাপদ অভিবাসন।
প্রেস সচিব জানান, কসোভা একটি ছোট দেশ হলেও এর অর্থনীতি ইউরোপে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯০-র দশকে এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিল, তবে গত দুই বছরে এটি ইউরোপের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ফিনল্যান্ড ও ইতালি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রেস সচিব আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা ‘অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস রাউন্ডটেবিলে বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি মেটলাইফ, শেভরন ও এক্সেলেরেট এনার্জিসহ আমেরিকার শীর্ষ কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফরে আসা বাংলাদেশের ছয় রাজনৈতিক নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ‘অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)।উভয় নেতা আলোচনা করেন যে সম্প্রতি কয়েক বছরে সার্ক কার্যত নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করা উচিত।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।