চট্টগ্রাম বন্দর ডক এলাকার শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য, চিকিৎসা সুবিধার অভাব এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছেন। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে তারা ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, একই ধরনের কাজ করেও ভিন্ন কোম্পানিতে মজুরি কাঠামো আলাদা। কোথাও ৩৩৩ টাকা, কোথাও ২৮০ টাকা, আবার কোথাও এপ্রেস কন্টেইনারে ৩৬০ টাকার স্থলে দেওয়া হচ্ছে ২৬০ টাকা। তারা এই বৈষম্যকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও শোষণমূলক বলে আখ্যা দেন।
শ্রমিকরা আরও জানান, বছরের পর বছর কাজ করেও অনেকের এখনো স্থায়ী গেইট পাস হয়নি। এতে চাকরির নিশ্চয়তা নেই, পরিচয়ের সংকটে ভুগতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, গেইট পাস ও কাজ পেতে হলে মালিকপক্ষের লোকদের কমিশন দিতে হয়।
এছাড়া বহির্নোঙ্গরে কর্মরত শ্রমিকদেরকেও বন্দরের শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্মকর্তা নিয়োগ পেলেই তারা উৎসব বোনাস পান, অথচ শ্রমিকদের বেলায় ৬ মাস চাকরি স্থায়িত্বের শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়।
“সাইফ পাওয়ার টেক” নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়মবহির্ভূতভাবে গেইট পাস দেয় এবং শ্রমিকদের ন্যায্য রেট কমিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও রয়েছে মারাত্মক বৈষম্য। শ্রমিকদের জন্য নেই নির্ধারিত কোনো হাসপাতাল, যা প্রাণঘাতী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। শ্রমিক জসিমের মৃত্যুকে তারা চিকিৎসা অবহেলার নির্মম উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
২০০৮ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী কন্টেইনার আয়ের ৭৫ শতাংশ শ্রমিকদের প্রাপ্য হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না বলে দাবি তাদের। ডেইলি স্লিপে ৩৮৫ টাকা লেখা থাকলেও প্রকৃত আয় থেকে বড় অংশ গায়েব হয়ে যায় বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
৬ দফা দাবি হলো:
১. সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য নিরসন
২. দীর্ঘদিন কাজ করা শ্রমিকদের স্থায়ী গেইট পাস প্রদান
৩. বহির্নোঙ্গরের শ্রমিকদের শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্তি ও পরিচয়পত্র
৪. শ্রমিকদের উৎসব বোনাসে সমান অধিকার
৫. ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকদের দ্রুত শ্রম শাখায় অন্তর্ভুক্তি ও তালিকা প্রকাশ
৬. দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা বন্দর থেকে বিতাড়ন এবং শ্রমিকবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এই ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে দেরি হলে পরবর্তী কর্মসূচিতে যেতে আমরা বাধ্য হবো।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ডক বন্দর শ্রমিক-কর্মচারি অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারভেজ, সদস্য সচিব মোঃ শামিম, আবুল কালাম মিয়া, মোঃ আবুল আলম, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।