রবিবার | ২৭ জুলাই | ২০২৫

বিধ্বস্ত গাজ্জায় পানিও এখন মৃত্যুর কারণ

spot_imgspot_img

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজ্জায় এখন বিশুদ্ধ পানি পাওয়া খুব কঠিন। পানি খুঁজতে গিয়ে প্রায় সময়ই দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সম্প্রতি গাজ্জার নুসাইরাত ক্যাম্পে পানি আনতে গিয়ে নিহত হন ১১ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ছিল ৭ জন শিশু।

গাজ্জার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ইসরাইল ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করছে। কূপ, পাইপলাইন ও পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট সবই ক্ষতিগ্রস্ত। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৫ শতাংশের বেশি পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখন অচল। মেরামতের যন্ত্রপাতিও ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

গত ২১ জুলাই গাজ্জার রিমাল এলাকায় একটি ডেসালিনেশন প্ল্যান্টে হামলা চালানো হয়। এতে ৫ জন মারা যায়। এই প্ল্যান্টটি শহরের হাতে গোনা বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলোর একটি।

তথ্য বলছে, পানি আনতে গিয়ে বহু মানুষ এখন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ায়। প্রচণ্ড গরম, ক্ষুধা ও হামলার ভয়ে থেকেও তারা লাইনে থাকে। কখনো কখনো তারা হামলার শিকার হয়। পানির দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তু। তাদের ওপরও হামলা হয়, প্রতিনিয়ত।

অপর দিকে, অনিরাপদ পানি খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিক আহমাদ আবুশাওয়িশ জানান, কূপের পানি খেয়ে তিনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন। তার শরীর হলুদ হয়ে যায়, পেটে তীব্র ব্যথা হয়, তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। অনেকেই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। অনেক শিশু ও বয়স্ক মানুষ এসব রোগে মারা যাচ্ছে।

স্থানীয়দের বরাতে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানি না থাকায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। গাজ্জায় এখন মাথাপিছু দিনে ২ থেকে ৯ লিটার পানি মিলছে। অন্যদিকে ইসরাইলি নাগরিকরা দিনে গড়ে ২৪৭ লিটার পানি ব্যবহার করেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজ্জার উপকূলীয় এলাকাও এখন সামরিক নিষিদ্ধ এলাকা। কেউ সমুদ্রের ধারে গেলেও গুলি ছোঁড়া হয়। জাতিসংঘ জানায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি জেলে নিহত হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গাজ্জায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানি বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। এক বছর পেরিয়ে গেছে। এখনো হাজার হাজার মানুষ এই পানি সংকটে মারা যাচ্ছে। অনেকে মারা গেলেও তাদের খবর আর রেকর্ডে আসে না। ফলে গাজ্জায় এখন পানি কেবল জীবন রক্ষার উপাদান নয়, হয়ে উঠেছে মৃত্যুর কারণ।

সূত্র: আল জাজিরা

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img