বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের দাবিতে তৌহিদী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ

ইসলাম অবমাননাকারী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিবাদে রাজধানীর ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তৌহিদী ছাত্র-জনতা।

আজ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজের পর রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হওয়া বিশাল মিছিল শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মীর ইদরীস নদভী।

মুফতি মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লেখক ও প্রকাশক আহমদ রাফিক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা মামুনুর রশিদ কাসেমী, মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক খান, লেখক ও গবেষক শামসুল আরেফিন শক্তি, ড. মেহেদী হাসান, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া মাসুদ, ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক কাজী মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা নাজমুস সাকিব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র, ১৮ কোটি মুসলমানের দেশ। প্রতিটি ইঞ্চি মাটি আযানের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়। অথচ এই দেশে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান রক্ষার জন্য রাস্তায় নামতে হয়, রক্ত দিতে হয়।

গত ১০ দিন ধরে দেশের মুসলমানরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবমাননার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। ইসলামবিদ্বেষী রাখাল রাহা মহান আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে জঘন্য কটূক্তি করেছে। এর আগে কথিত কবি সোহেল গালিব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষায় কটূক্তি করেছে।

বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি এই অন্যায় মেনে নেব? আমরা কি চুপ করে বসে থাকবো? না, আমরা বসে থাকবো না!”

তারা আরও বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট—শহর থেকে গ্রাম, রাস্তা থেকে মসজিদ—একই আওয়াজ উঠেছে, একটিই দাবি: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই! কিন্তু সরকার কী করেছে? চুপ থেকেছে! ন্যায়বিচারের বদলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে!

বক্তারা বলেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাখাল রাহা মহান আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছে। জনগণ সরকারের পদক্ষেপের অপেক্ষায় ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে। তিন দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বারবার মামলা দায়েরের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছে!

তারা বলেন, আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি—ফের মুসলিম জনতা রাস্তায় নেমেছে, ঈমানের দাবিতে পথে এসেছে। আমরা অতীতেও দেখেছি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই সরকার নিষ্ক্রিয় থেকেছে। উল্টো অপরাধীদের রক্ষা করেছে! এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র!

বক্তারা স্পষ্ট করে বলেন, অন্য কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে এমন কিছু হলে সরকার নিশ্চুপ থাকতো না! কিন্তু যখন ইসলাম আক্রান্ত হয়, তখন সরকার মামলা নিতে গড়িমসি করে, অপরাধীকে গ্রেফতার করে না, উল্টো আমাদের ধৈর্যের পরামর্শ দেয়!

তারা আরও বলেন, আমরা যদি চাইতাম, তাহলে আজকের এই সমাবেশের চেয়ে ১০ গুণ বড় সমাবেশ করতে পারতাম। সারা দেশজুড়ে অবস্থান কর্মসূচি দিতে পারতাম। ঘেরাও কর্মসূচি দিতে পারতাম। যদি আমরা আজ ডাক দেই, তাহলে লক্ষ মানুষ একদিনের নোটিশে ঢাকা অভিমুখে রওনা হবে!

কিন্তু আন্দোলনকারীরা কঠোর কর্মসূচি দেয়নি। কেন? কারণ তারা জাতীয় পরিস্থিতি বুঝে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংকটময়, জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই জাতীয় স্থিতিশীলতা ও দেশের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা সকল শক্তি রাস্তায় নামায়নি।

বক্তারা বলেন, আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরো শক্তি রাস্তায় নামাইনি। কিন্তু কেউ যেন ভুল না করে—আমরা থামিনি, থামবো না! দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং পবিত্র রমজানের সূচনা বিবেচনায় আপাতত রাজপথের কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত থাকবে। তবে আন্দোলন থেমে যাবে না, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

রমজানে এই আন্দোলনকে প্রতিটি মহল্লায়, প্রতিটি মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান বক্তারা। প্রতিটি মসজিদে ইসলাম অবমাননার ইস্যুতে গণসচেতনতা কর্মসূচি চালানো হবে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, এলাকায় মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আলোচনা সভা হবে। সেহরি, ইফতার ও তারাবিহর সময় বিশেষ দোয়ার কর্মসূচি পালিত হবে। ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পরিচালিত হবে।

বক্তারা সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার যদি এই সুযোগকে অবহেলা করে—তাহলে আবার রাস্তায় নামবো! এটি কোনো হুমকি নয়, এটি বাস্তবতা।

তারা আরও বলেন, জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখা শুধু আমাদের দায়িত্ব নয়, এটি পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়। সরকার যদি আমাদের কাছ থেকে সংযম আশা করে, তাহলে প্রথমে তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এটি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়—এটি ঈমানের প্রশ্ন। এটি জাতির আত্মমর্যাদার প্রশ্ন।

তারা সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন, ন্যায়বিচার ছাড়া এই আগুন নেভানো যাবে না। মুসলমানদের ধৈর্যেরও সীমা আছে!

spot_imgspot_img

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img