রবিবার, জুন ৮, ২০২৫

তুর্কি শতাব্দীকে শান্তির শতাব্দীতে রূপান্তরের অঙ্গীকার এরদোগানের

spot_imgspot_img

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও একে পার্টির চেয়ারম্যান রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, “তুর্কিয়ে শতাব্দীকে আমরা ভ্রাতৃত্ব, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং দেশের সর্বত্র শান্তির শতাব্দীতে রূপান্তরিত না করা পর্যন্ত নিরবিচারে কাজ করে যাবো।”

কুরবানির ঈদ উপলক্ষে একে পার্টির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, এই ঈদ যেন একে পার্টির সংগঠন, দেশের সব নাগরিক, মুসলিম বিশ্ব ও পুরো মানবজাতির জন্য শান্তি, প্রশান্তি ও ঐক্যের উপলক্ষ হয়, এই কামনাই আমি আল্লাহর কাছে করছি।

এরদোগান বলেন, এই পবিত্র দিনে আমি আমাদের দেশ, পতাকা ও জাতির জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ ও কল্যাণময় জীবন কামনা করছি। আর যারা ইন্তেকাল করেছেন, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট রহমত কামনা করছি।

তিনি বলেন, ঈদ আসলে শিশুদের উৎসব। আমাদের দেশের শিশুদের পাশাপাশি উম্মাহর শিশুদের ঈদও আমি উদযাপন করছি এবং তাদের ঈদের আনন্দে ভরা চোখগুলোতে চুমু দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জীবনের অনেকটা সময় যারা পরিবার, দেশ ও সন্তানের কল্যাণে ব্যয় করেছেন, এমন সব প্রবীণ ভাই-বোনদের ঈদও আমি আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

এরদোগান বলেন, ইসরাইল গত ২০ মাস ধরে গাজ্জায় যে গণহত্যা, ধ্বংস, বর্বরতা ও নিপীড়নের নীতি চালিয়ে যাচ্ছে, সে কারণে মুসলমানদের জন্য এই ঈদও হৃদয়ভাঙা বেদনার।

একদিকে আমরা কুরবানির ঈদ উদযাপনের সৌভাগ্য লাভ করছি, অন্যদিকে গাজ্জার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঈদ পালন করা নির্যাতিত ভাইদের বেদনা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসরাইলি সরকারের অমানবিক হামলা সত্ত্বেও জন্মভূমিকে সাহসিকতার সঙ্গে রক্ষা করা, জীবন দিয়ে গাজ্জাকে আগলে রাখা ফিলিস্তিনি ভাইদের আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, ঈদের শুভেচ্ছা জানাই এবং শহীদ ভাইদের স্মরণ করছি।

এরদোগান একে পার্টির নেতাকর্মীদের বলেন, ঈদের এই সময়টিতে যেন তারা এতিম, অনাথ, নিপীড়িত শিশুদের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেন এবং তাদের জীবনেও ঈদের উষ্ণতা পৌঁছে দেন।

তিনি বলেন, শহীদদের পরিবার ও তাদের দায়িত্ব যেন কখনোই উপেক্ষিত না হয়।

এরদোগান বলেন, জুমহুর ইত্তেহাদ আজ তুরস্কের জন্য প্রতিটি দিক থেকে এক গ্যারান্টি।

তিনি বলেন, শিক্ষা, বিচার, পররাষ্ট্রনীতি, গণতন্ত্র, প্রতিটি ক্ষেত্রে তুরস্ককে যথাযথ অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার যে সাহস, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা দরকার, তা একে পার্টি ও জোটের মধ্যেই রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ বছরে যখন শান্তি আলোচনা ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত হয়, সেটিই আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ।

সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক গড়ার পথে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, তা প্রমাণ করে দেশীয় ও জাতীয় সমাধান তৈরির আমাদের ক্ষমতা।

তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার সফল পরিণতিই হবে ৮৬ মিলিয়ন নাগরিকের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করা। ইনশাআল্লাহ, কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই আমরা সফল হব।

তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান, রপ্তানির বিষয়ে আমরা ইতিবাচক খবর পাচ্ছি। প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির পরিসংখ্যানের মতোই, সম্প্রতি প্রকাশিত মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যানও লক্ষ্য অনুযায়ী এগোচ্ছে।

এরদোগান বলেন, তুর্কিয়ে শতাব্দীকে আমরা ভ্রাতৃত্ব, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও শান্তির শতাব্দী হিসেবে গড়বো ইনশাআল্লাহ।

এই পথচলায় ৮৬ মিলিয়ন নাগরিকের কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না। বিভক্তি, সংঘাত ও উত্তেজনার রাজনীতিকে কোনো প্রাধান্য দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে এই পবিত্র দিনে, এমন একজন মানুষও যেন না থাকে যার দরজায় কেউ যায়নি, যাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি, যার মন জয় করা হয়নি। আমরা সবাই মিলে এভাবেই জাতিকে সেবা দিতে থাকবো।

এরদোগান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, কোরবানির ইবাদত ও যারা বর্তমানে পবিত্র ভূমিতে হজ পালন করছেন তাদের ইবাদত যেন কবুল হয়।

তিনি ঈদের সময় দায়িত্ব পালনরত নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি কর্মীদের ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “আল্লাহ যেন আমাদের আরও অনেক ঈদ দেখান, প্রকৃত ঈদের মতো ঈদ—এ কামনায় সবাইকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা। আল্লাহর হেফাজতে থাকুন।”

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img