নিজস্ব প্রযুক্তির হাইপারসনিক মিসাইল ও বাংকার ব্লাস্টার তৈরি করে বিশ্বকে চমকে দিলো তুরস্ক।
সম্প্রতি মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অস্ত্র মেলায় হাইপারসনিক মিসাইল, বাংকার ব্লাস্টার সহ আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র সামনে এনে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে তুরস্ক।
তুর্কি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রকেটসান নিজস্ব প্রযুক্তিতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে।
প্রতিষ্ঠানটির জিএম মুরাদ আকিঞ্জি এপ্রসঙ্গে বলেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি আমাদের আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তুর্কি সামরিক বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে। এছাড়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যালিস্টিক, হাইপারসনিক ও বাংকার ব্লাস্টারের মতো ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সভাপতি হালুক গরগুন বলেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে আরো কয়েক ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ও হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চলমান। যথাসময়ে সেগুলোও সকলের সামনে উন্মোচন করা হবে।
এর আগে গত জুনে দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রতিরোধ সক্ষমতা শক্তিশালী করতে মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ বাড়াতে যাচ্ছে তুরস্ক। মহাকাশ কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য জানুয়ারিতে ‘জেঙ্গ’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র সফলতার মুখ দেখেছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। যা ২ হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যাওয়ার সক্ষমতা রাখে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, তুরস্কের তৈরি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম টাইফুন ব্লক-৪। এটির দৈর্ঘ্য ১০ মিটার ও ওজন ৭.২ টন। এতে ১ হাজার কিলোমিটার দূরের বস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।
দুর্বল বিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা সত্ত্বেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফলতা এধরণের ক্ষেপণাস্ত্রকে বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।
মেলায় ‘৩০০ ইআর’ নামে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য আরেকটি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রও সামনে আনে দেশটি। যুদ্ধবিমান ও ড্রোনযোগে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান সত্ত্বেও যা ৫০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে ইরাক সীমান্তে সফলভাবে হামলা চালাতে ইসরাইল এধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিলো বলে মনে করা হচ্ছে।
মেলায় সবচেয়ে বড় চমক ছিলো তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বাংকার ব্লাস্টার। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘এনইবি’।
তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক নিলুফার কুজুলু বাংকার ব্লাস্টার প্রসঙ্গে জানান, আধুনিক প্রযুক্তির বাংকার ব্লাস্টার তৈরিতে ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা কাজ করে যাচ্ছিলেন। মানোন্নয়ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চূড়ান্ত সার্টিফিকেশনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় তুরস্কের এই সক্ষমতাকে আড়ালে রাখা হয়েছিলো।
তিনি আরো জানান, তারা সি-৫০ গ্রেডের কংক্রিট ও ২২ মিলিমিটারের রিবড স্টিল দিয়ে তৈরি শক্তিশালী কংক্রিট ব্লকের উপর এনইবি’ বাংকার ব্লাস্টার দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন। প্রথম আঘাতেই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৭ মিটার গভীরে চলে যায়। এরপর ক্ষেপণাস্ত্রের মূল কোর ১.৫ টন কংক্রিট ব্লক ভেদ করে এগিয়ে যেতে থাকে এবং বালির স্তর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। এছাড়া আকাশ থেকে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, এটি ৯০ মিটার গভীর পর্যন্ত ভেদ করে পাথরের সর্বশেষ স্তরও ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়।
সফল পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি তুরস্কের দারুণ অর্জন। এটি ভীষণ চ্যালেঞ্জিংও ছিলো আমাদের জন্য।
উল্লেখ্য, নিজস্ব প্রযুক্তির বাংকার ব্লাস্টার তৈরি করে এর অধিকারী দেশের তালিকায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে তুরস্ক। এতদিন যাবত আমেরিকা, চীন, রাশিয়া ও ইসরাইল শুধু এই ৪টি দেশই শক্তিশালী বাংকার ব্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী ছিলো।
আমেরিকা সম্প্রতি পাহাড় ও পাতালের গভীরে অবস্থিত ইরানের ইউরেনিয়াম প্লান্ট ধ্বংস করতে তাদের শক্তিশালী বাংকার ব্লাস্টার ব্যবহার করেছিলো।