শাহবাগীরা মব জাস্টিসের প্রবর্তক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।
তিনি বলেন, শাহবাগ তথা বাম চেতনাধারীরাই মব জাস্টিসের প্রবর্তক। তারা ২০১৩ সালে শাহবাগকে প্রকাশ্যে রায় ঘোষণার মঞ্চ তৈরি করেছিল। তারা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল, যা আজকে আয়নাঘর, গুম ও বিচারহীনতা সংস্কৃতির বীজ বপন করেছিল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে ঢাবির টিএসসিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাবি শিবির সভাপতি বলেন, শাহবাগের প্রজন্ম কখনোই আইনের শাসন বিশ্বাস করেনি। তারা মব তৈরি করে মিডিয়াকে ম্যানুপুলেট করে জাতিকে ধুয়ো দিয়েছে। তারা আজও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার বর্ণচোরা কাজে লিপ্ত। ইতিহাসে বিচারের নামে ফাঁসি নয়, রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর এ হত্যাকাণ্ডের দায় শুধু হাসিনার সরকারের নয়, শাহবাগ পন্থী ও বামপন্থী সংগঠনগুলোও এই দায় এড়াতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমাদের আজকের আয়োজনের প্রেক্ষিতে যারা বিক্ষোভ করেছে তারা বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতা। কিন্তু বেশ কয়েকটি মিডিয়া তাদেরকে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে দেখিয়েছে যা একটি দ্বিচারিতামূলক আচরণ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হওয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরাও চাই। মুক্তিযুদ্ধের পরে একটি চক্র বাকশাল কায়েম করেছে। পরবর্তীতে সেই প্রজন্ম এসে শাহবাগ তৈরি করেছে। তাদের দ্বারা বিভিন্ন সময় বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং তারাই হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে তৎপর।
ফরহাদ বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের এক্সটেন্ডেড (সম্প্রসারিত) রূপ হচ্ছে আজকের চব্বিশের অভ্যুত্থান। ৭১ এবং ২৪ কে মুখোমুখি করার যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে তারা তাদের কিছু এজেন্ডা কুক্ষিগত করতে চায়। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের স্বীকার হয়ে যারা পুরোনো ইস্যুকে (বিষয়) হাজির করে জাতিকে বিভাজন করার দিকে ও মিথ্যা বয়ান চাপিয়ে দেন তাদের রাজনীতি কখনোই টিকবে না।
যারা শাহবাগের পক্ষে ছিল তাদের উদ্দেশ্যে শিবির নেতা বলেন, বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেওয়া হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তখন গুলি করে প্রায় ২০০ মানুষ হত্যা করা হয়। সেদিনে গুলি করে হত্যা করাটাকে যারা বৈধতা দিয়েছিল, সেই বৈধতা দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ অভ্যস্ত হয়েছে গুলি করে হত্যা করায়। পরবর্তী জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এই যে বৈধতা দিয়ে যারা প্রকাশ্যে দুই শতাধিক মানুষকে হত্যা করার বৈধতা উৎপাদন করেছে, তারা এই দায় কখনো এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা আবারও স্পষ্ট করছি, সব ধরনের বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল, এখনো আছে, সামনেও থাকবে। শাহবাগের মধ্য দিয়ে তাদের যে বিভাজনের রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দাঁড় করাতে চেয়েছিল, চব্বিশে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক একইভাবে বাহাত্তর সাল থেকে তাদের নীরব প্রচেষ্টা এবং সক্রিয় প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বাকশাল কায়েম করার চেষ্টা করেছিল। তারা ব্যর্থ হয়েছে, পারেনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে টিএসসিতে জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাবি ছাত্রশিবির আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে কিছু জামায়াত নেতা ও বিএনপি নেতার ছবি বসানো হয়, পরে বামপন্থিদের তোপের মুখে সরিয়ে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করতে থাকে শিবির ও বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।