মঙ্গলবার | ২ ডিসেম্বর | ২০২৫

আগামী মাসে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া : প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ আগামী মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙতে এবং গাজ্জায় সংঘাত, দুর্ভোগ ও অনাহার শেষ করতে দুই রাষ্ট্র সমাধানই মানবতার জন্য সর্বোত্তম আশা। এই ঘোষণা দখলদার ইসরাইলের প্রায় দুই বছরব্যাপী গাজ্জায় চলমান আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে এসেছে। এর আগে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা সেপ্টেম্বরে ইউএনজিএতে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট), অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এই ঘোষণা দেন।

অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি জনগণের নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার ন্যায্য অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এই অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবে। গাজ্জায় দখলদার ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদি হামলা, অবরোধ ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলো যুদ্ধবিরতি ও ন্যায়ভিত্তিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এখানে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করবে অস্ট্রেলিয়া। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা কাজ করব।” অ্যালবানিজ আরও জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাকে আশ্বস্ত করেছে যে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো সশস্ত্র ভূমিকাই থাকবে না, গাজ্জা ডিমিলিটারাইজড হবে এবং নির্বাচন হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতেই ক্যানবেরা স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমানে গাজ্জায় মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই; প্রায় দুই দশক ধরে গাজ্জার শাসনভার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে।

অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বানকে সমালোচনা করে দাবি করেন, এতে শান্তি আসবে না, বরং আরও যুদ্ধের সূত্রপাত হবে। তিনি ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনাকে ‘হতাশাজনক’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দেন।

অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত আমির মাইমন বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তকে “শান্তির পক্ষে ক্ষতিকর” বলে সমালোচনা করেছেন।

এদিকে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স জানিয়েছেন, তার দেশও আগামী মাসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, এটি কেবল সময়ের ব্যাপার, স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে কোনো সন্দেহ নেই।

বিবিসি জানিয়েছে, অ্যান্থনি অ্যালবানিজ তার বক্তব্যে দখলদার ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করা এবং গাজ্জায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, জার্মানির ফরসা ইনস্টিটিউট ফর ফরেন পলিসি জার্নাল ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির গড়ে ৫৪ শতাংশ মানুষ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় দখলদার ইসরাইলের হামলায় গাজ্জায় ৩৫ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ৬১ জন শহীদ হয়েছেন। অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৭, এর মধ্যে প্রায় ১০০ শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৬১ হাজার ৪৩০ ফিলিস্তিনি শহীদ এবং এক লাখ ৫৩ হাজার ২১৩ জন আহত হয়েছেন।


সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, এবিসি নিউজ অস্ট্রেলিয়া, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, দ্য টাইমস অব ইসরাইল, এনজেড হেরাল্ড, ডয়চে ভেলে, মিডল ইস্ট আই, ওয়াফা নিউজ এজেন্সি

spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img