মঙ্গলবার | ২৩ ডিসেম্বর | ২০২৫
spot_img

হাসিনা এবার মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি: দ্য টেলিগ্রাফ

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর কিছুদিন পরই গত ১৫ বছরের গুম, খুন, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়।

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এমনটাই লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা পরিচয় দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।

প্রসিকিউশন দাবি করেছে, শেখ হাসিনার আদেশেই দমন অভিযানের সময় নিহতদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। শেখ হাসিনা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তার ১৫ বছরের শাসন অবসানের সময় যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তাতে আনুমানিক ১,৪০০ জন প্রাণ হারান।

এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে; মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে। অল্প সময়ের মধ্যেই তা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে রূপ নেয়।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন, কিছুক্ষণ পরেই ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। একই দিনে ঢাকার একটি ব্যস্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

তার শাসনামলে ব্যাপক ভোট কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ উঠেছিল, যার মধ্যে শিশুদের গুমের ঘটনাও ছিল।

প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, তার দল ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে যা শেখ হাসিনাকে সরাসরি ওই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে, তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। তার সরাসরি নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’

আদালত ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি দোষ স্বীকার করেছেন।

স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিলেন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১,৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা মানবিকভাবে সম্ভব নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনার) একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা, নিজের ও পরিবারের জন্য। তিনি এক কঠোর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং তার বর্বরতার জন্য কোনো অনুশোচনাও প্রকাশ করেননি।’

এদিকে রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন, যা আগামী সপ্তাহে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যভাগে ঘোষণা করা হতে পারে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে, যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি এ বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটেন সরকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, তিনিও বাংলাদেশে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার খালার প্রভাব ব্যবহার করে নিজের পরিবারের জন্য জমির প্লট বরাদ্দে প্রভাব খাটিয়েছেন। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

spot_img
spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img