শনিবার | ২৭ ডিসেম্বর | ২০২৫
spot_img

২৭ ডিসেম্বর অজেয় আফগানিস্তানের কালো দিন

২৭ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে “কালো দিন” হিসেবে পরিচিত, ১৯৭৯ সালের এ দিন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আক্রমণ করে, যা শুধু সামরিক সংঘাত নয়, বরং আফগান জনগণের আত্মার জন্য লড়াইয়ে পরিণত হয়। এদিন থেকেই শুরু হয়েছিল আধুনিক যুগের এক বিশাল আগ্রাসীর বিরুদ্ধে আফগান জনগণের সাহসী প্রতিরোধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

২৫,০০০ এর বেশি সৈন্য নিয়ে সোভিয়েতের আগ্রাসন শুরু হয়। এটি কেবল আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে আঘাত ছিল না, বরং দেশটির সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং গভীর বিশ্বাসের উপরও আঘাত হানে। আফগান জনগণের জন্য এটি ছিল এক অকল্পনীয় আঘাত। এই আগ্রাসন রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের সূচনা করে, যা দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।

সোভিয়েত সেনারা সময়ের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাঙ্ক, বিমান ও আধুনিক যুদ্ধযন্ত্র নিয়ে ধ্বংসাত্মক আক্রমণ চালায়। যুদ্ধ দ্রুত পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শহর এবং গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সোভিয়েত সেনারা কোনো দয়া দেখায়নি; পুরো সম্প্রদায়কে বোমা মেরে ধ্বংসের ছাপ রেখে যায়। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ জীবন হারায়, এবং লাখ লাখ আফগান তাদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করে দেশের ভেতর বা বাইরে শরণার্থী হয়ে যায়।

সময়ের সাথে সাথে সোভিয়েতের নৃশংস আগ্রাসন ভায়াবহ আকার ধারন করে। টরচার, হত্যাযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এতে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আর অনেকে আহত বা অক্ষম হয়ে পড়েছেন।

তবুও, এই সব নৃশংসতার বিরুদ্ধে আফগান জনগণ আত্মসমর্পণ করেনি। সাধারণ পুরুষ ও মহিলা, তাদের বিশ্বাস ও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, বিদেশী আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। আফগান মুজাহিদিন, যারা মূলত তরুণ ও অপরিপক্ব যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত, বিশ্বের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়। তারা ইসলাম ও মাতৃভূমির রক্ষা করার ইচ্ছা থেকে শক্তিতে বলিয়ান হয়ে পুরনো রাইফেল এবং ঘরোয়া অস্ত্র নিয়ে সভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে।

নয় বছরের কঠোর সংগ্রামের পর, মুজাহিদরা অসম্ভব মনে হওয়া যুদ্ধটিকে কৌশলগত বিজয়ে পরিণত করে। ধীরে ধীরে সোভিয়েত বাহিনীকে পশ্চাদপদে ঠেলে দেয়। আফগান প্রতিরোধের সাহস, দৃঢ়তা ও লড়াই করার ইচ্ছা যুদ্ধের ধারা তাদের পক্ষে ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৮৯ সালের মধ্যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত হয়ে আফগানিস্তান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। তারা লজ্জিতভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল।

সোভিয়েত পরাজয় শুধু আফগানিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি সোভিয়েত দখলের সমাপ্তি করেছে এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন হয়েছে, শীতল যুদ্ধের দিক পরিবর্তিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিশীলতায় প্রভাব পড়েছে। আফগান প্রতিরোধের সাফল্য প্রমাণ করে যে, সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীও ঐক্যবদ্ধ জনগণের দৃঢ় সংকল্পকে পরাজিত করতে পারে না।

২৭ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ সাল আফগান জনগণের সাহস, ধৈর্য ও দৃঢ়তার এক স্মৃতিচিহ্ন। সেই দিন এবং পরবর্তী বছরগুলো প্রমাণ করে, কোনো সেনাবাহিনী যত শক্তিশালী হোক না কেন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জাতির আত্মাকে কখনও ভেঙে দিতে পারবে না। আফগানিস্তান, অজেয় দেশ, তার জনগণের শক্তি এবং অটল সংকল্পের সাক্ষ্য হিসেবে আজও অব্যাহতভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

সূত্র: হুরিয়াত রেডিও

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img

সর্বশেষ