রাশিয়ার মাধ্যমে নতুন ৩টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ইরান।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্যে অবস্থিত একটি উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে নতুন ৩টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ইরান। সয়ুজ রকেটে করে এসব সফলভাবে মহাকাশে পাঠানো হয়।
উৎক্ষেপিত স্যাটেলাইটগুলো হলো, কাওসার-১.৫, পায়া এবং জাফার-২। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের যেসব মহাকাশ উৎক্ষেপণ হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ- যার অনেকগুলোই রাশিয়ার সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, সয়ুজ রকেটটি ইরানের স্যাটেলাইটগুলোর পাশাপাশি কুয়েত ও বেলারুশের কিছু পে-লোডও বহন করেছিলো।
ইরানের তথ্য অনুযায়ী, কাওসার ১.৫ স্যাটেলাইট বা উপগ্রহটি পূর্বের রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইটের একটি উন্নত সংস্করণ, যা মূলত উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি ধারণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কৃষি খাতে ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে একে বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে।
ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, কাওসার ১.৫ স্যাটেলাইটটি একটি জ্ঞানভিত্তিক (knowledge-based) দেশীয় কোম্পানি ও ইরান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে তৈরি, যা সরকারি ও বেসরকারি খাতের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার প্রতিফলন।
এছাড়া জাফার-২ ইরানের আরেকটি উন্নত পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ, যা ইরান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নির্মাণ করেছে। এর ওজন প্রায় ১০০ থেকে ১৩৫ কেজি। এটি প্রাকৃতিক সম্পদ পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি পাঠাতে সক্ষম।
‘পায়া’ নামক স্যাটেলাইটটির ব্যাপারে জানানো হয় যে, এটি উৎক্ষেপিত ৩টি স্যাটেলাইটের মধ্যে সবচেয়ে ভারী। এটি ইরান ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইরান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত। প্রায় ১৫০ কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইটটি একটি আধুনিক রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট হিসেবে বিবেচিত এবং দেশীয়ভাবে তৈরি সবচেয়ে উন্নত ইমেজিং স্যাটেলাইটগুলোর একটি।
নতুন ৩টি স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ দেশটিতে ব্যাপকভাবে অনুসরণ করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া রাষ্ট্র আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইতোপূর্বে তারা ইরানের মহাকাশ কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলো এবং দাবী করে আসছিলো যে, এসব উৎক্ষেপণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘন করে। তবে ইরান বরাবরই এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
রোববারের উৎক্ষেপণের আগে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ইরানের স্যাটেলাইট কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক ও বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে ইরান স্পেস এজেন্সিকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।
তিনি বলেন, নিউক্লিয়ার বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা শিল্প, ন্যানোপ্রযুক্তি ও স্যাটেলাইট উন্নয়নে ইরানের সব কার্যক্রম সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের অনেক উৎক্ষেপণ প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখে পড়লেও এবার দেশটি উৎক্ষেপণে সফলতা পেয়েছে, যা রাশিয়ার সাথে দেশটির মহাকাশ প্রযুক্তি সহযোগিতা আরো জোরদার হয়েছে বলে প্রমাণ করে।
রোববার উৎক্ষেপণের আগে রাশিয়ায় নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি বলেন, তেহরান ও মস্কোর মধ্যে মহাকাশ খাতে সহযোগিতা ব্যাপক ও বহুমুখী। স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, উৎক্ষেপণ যান এবং কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপনে রাশিয়া একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়াও বলেন, এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে রাশিয়ার সহায়তায় মহাকাশে পাঠানো ইরানি উপগ্রহের সংখ্যা সাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।











