উম্মুল মাদারিস আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা সচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা হাফেজ মুহাম্মাদ জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা আবদুল হাই নদভী।
রবিবার (২২ আগস্ট) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় বায়তুশ শরফের পীর বলেন, আমি হযরতের মৃত্যুর সংবাদ শ্রবণে অত্যন্ত ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছি। করোনার এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা হারাচ্ছি একের পর এক উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যারা ছিলেন সত্যিকার অর্থেই ওলামায়ে রব্বানী। গত বছর থেকে হক্কানী আলিমদের মৃত্যুর যে মিছিল শুরু হয়েছে তা যেন থামছেই না। গত এক বছরে আমরা হারিয়েছি বাহরুল উলুম মাওলানা শাহ্ মুহাম্মাদ কুতুব উদ্দিন, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী, মুফতী ওয়াক্কাসসহ অসংখ্য উম্মাহ্ দরদী শীর্ষ আলেমদের। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁদের সবাইকে মাগফিরাত দান করুন।
আল্লামা বাবুনগরীর রহ. এর জীবনের স্মৃতিচারণ করে বায়তুশ শরফের পীর বলেন, আল্লামা বাবুনগরী রহ. ইলমুল হাদীসের সেবায় বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বে বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি হাদীসের শিক্ষা সরাসরি অর্জন করেছেন জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খুল হাদীস আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.) থেকে। তিনি মহান আল্লাহর সাহায্যে নিজের অসাধারণ প্রচেষ্টায় আল্লামা বিন্নুরীর (রহ.) শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হন।
মাওলানা আব্দুল হাই নদভী বলেন, আমি বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি, তিনি শুধুমাত্র হাটহাজারী মাদরাসাতেই সুদীর্ঘ ৪০ বছর ইলমুল হাদীসের দরস দিয়ে আসছিলেন। এছাড়াও তাঁর আরেকটি অনন্য কীর্তি হলো হাটহাজারী মাদরাসাতে উসুলুল হাদীসের স্বতন্ত্র বিভাগ খোলা। এই অসামান্য উদ্যোগটিই যথেষ্ট তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার জন্য।
মাওলানা আব্দুল হাই নদভী আরও বলেন, আমি তাঁকে যতটুকু দেখেছি এবং জেনেছি তাতে বুঝতে পেরেছি তিনি ছিলেন বিনয়ী, ভদ্র, সজ্জন এবং হক্বের ক্ষেত্রে আপোষহীন। ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দুর্যোগময় মুহূর্তে তিনি এগিয়ে এসেছিলেন সর্বাগ্রে। দ্বীনি বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তাওহীদবাদী জনতার নেতৃত্ব। ফলশ্রুতিতে তিনি সহ্য করেছেন রিমান্ডের ভয়ানক নির্যাতন, নিপতিত হয়েছেন কারাগারে; তবুও তিনি সত্য থেকে এক চুল পরিমাণ সরে আসেননি। বরঞ্চ আমার মনে হয়েছে তাঁর ঈমান যেন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও নতুন উদ্যমে নিজেকে সমর্পণ করেছেন উম্মাহ্’র খেদমতে। তাঁর জীবনের এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে তাঁকে ‘আপোষহীন’ সম্বোধন করাটা শতভাগ যথার্থ বলে মনে হবে। তাঁর ইন্তেকালে আজ আমরা অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে হযরতের মাগফিরাত কামনা করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে জানাই সমবেদনা। একইসাথে শোকে বিহ্বল ছাত্র, সহকর্মী, ভক্ত, অনুসারী তথা উম্মাহর সকল শোকাতুর সদস্যের জন্য সবর কামনা করছি। তাঁর রেখে যাওয়া দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্ব আশা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সকল দু‘আই শ্রবণ করেন এবং তিনিই একমাত্র দু‘আ কবুলকারী।
উল্লেখ্য, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. গত ১৯শে আগষ্ট ২০২১ ইংরেজী, মোতাবেক ৯ই মুহাররম ১৪৪২হিজরী, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২.৪৫মিনিটে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। তিনি ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে এবং অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত রেখে যান। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতীতে তাঁর নামাযে জানাযা সম্পন্ন হয় এবং শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফি রহ.-এর কবরের পার্শ্বেই তাঁকে দাফন করা হয়।