বিদ্যুৎ খাতে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে আফগানিস্তান। হেরাত প্রদেশে উদ্বোধন করা হয়েছে ৪৮.২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ৪৩.২ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ এবং ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প।
শনিবার (৩১ মে) এই প্রকল্পগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আফগানিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী (অর্থনৈতিক বিষয়ক) মোল্লা আবদুল গণি বারাদার আখুন্দ।
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ আমরা হেরাতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনের সাক্ষী হলাম। এ অর্জন দেশের শক্তি খাতের সম্প্রসারণ, আধুনিকীকরণ এবং আত্মনির্ভরতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পগুলো কেবল আমদানিকৃত বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে না, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ, টেকসই জ্বালানি প্রসার এবং নবীন প্রযুক্তির ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
মোল্লা বারাদার আখুন্দ জানান, আফগানিস্তান বহু বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে আসছে, যা দেশের বাজেটে বড় চাপ সৃষ্টি করে। “প্রতি বছর আমাদের জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ আমদানিকৃত বিদ্যুৎ কিনতেই ব্যয় হয়। অথচ এই বিদ্যুৎ একদিকে ব্যয়বহুল, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে এটি লাভজনক কিংবা নির্ভরযোগ্য নয়।”
এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ইসলামি আমিরাত বিদ্যুৎ খাতে দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছে। মোল্লা বারাদার বলেন, “এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রগতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পথও খুলে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলামি আমিরাত দেশে বিনিয়োগের জন্য একটি স্বচ্ছ ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে সহজ শর্তে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আমি দেশি-বিদেশি সকল বিনিয়োগকারীকে আহ্বান জানাই, তারা যেন এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন।”
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যথাযথ মান বজায় রেখে কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেন।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্প দুটির বাস্তবায়নে বেসরকারি খাত এবং আফগানিস্তান ব্রেশনা কোম্পানি যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেছে। ৪৩.২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৬৪ মিলিয়ন ডলার এবং ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে শুধু হেরাত নয়, বরং আশপাশের জেলাগুলোর জনগণও টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আফগানিস্তান যে এখন ধাপে ধাপে জ্বালানি খাতে আত্মনির্ভরতার দিকে এগোচ্ছে, এই প্রকল্পগুলো তার অন্যতম বড় প্রমাণ।
সূত্র: আরটিএ ও তোলো নিউজ