ইসরায়েলের হামলায় পাঁচ কর্মী শহীদ হওয়ার পর ইহুদিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বড় পরিসরের বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছে তুরস্কের ইহসান হাক ও হুররিয়েত মানবিক সহায়তা ফাউন্ডেশন। “প্রতিটি পদক্ষেপ গাজা ও কুদসের জন্য” শিরোনামে এই মিছিলে অংশ নেয় হাজারো ইস্তানবুলবাসী। ফাতিহ মসজিদ থেকে আয়াসোফিয়া মসজিদ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই মিছিল, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিন ও গাজায় চলমান বর্বরতার প্রতিবাদ জানান।
তুর্কি ও ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা গর্জে ওঠেন, “গাজার জন্য চুপ করে থেকো না”, “মাভি মারমারা আমাদের গৌরব”, “শহীদদের পথ অনুসরণ করব”, “শিশুরা যখন মারা যায়, তখন চুপ থাকা যায় না”।
মিছিল শেষে আয়াসোফিয়া ময়দানে সমবেত হয়ে অংশগ্রহণকারীরা কুরআন তিলাওয়াত করেন।
ইহসান হাক ও হুররিয়েত মানবিক সহায়তা ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট বুলেন্ট ইউলদিরিম বলেন, “মাভি মারমারার ওপর হামলা শুধু একটি সাহায্য তৎপরতা ছিল না, এটি ছিল তুরস্কের জন্য এক ঐতিহাসিক বাঁক। সেদিন থেকেই তুরস্ক আত্মনির্ভরশীল প্রতিরক্ষা শিল্পের পথে যাত্রা শুরু করে। ইসরায়েল বলেছিল তারা আর আমাদের অস্ত্র দেবে না, আমরা বলেছিলাম, তাহলে আমরা নিজেরাই তৈরি করব।”
তিনি বলেন, “গাজায় আমাদের সাহায্যকারী দলের ওপর ইসরায়েলের হামলায় আমরা শহীদ দিয়েছি। আমরা ত্রাণ বিলি করি, শহীদ হই। জাহাজ নিয়ে যাই, হামলার শিকার হই। একটি বেসরকারি সংগঠন আর কী করতে পারে? আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ইসলামি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, গাজায় সহায়তা পাঠাতে নিজেদের সামরিক শক্তি একত্রিত করুন।”
মিছিলে অংশ নেওয়া হুসেইন মুরাত বলেন, “গাজার মানুষের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন জানাতে আমরা রাজপথে নেমেছি। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমি দখলদার ইসরায়েলের পাশবিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা আমাদের সন্তানদেরও এ বিষয়ে সচেতন করছি। জায়নিবাদের বিলুপ্তির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল কেবল ফিলিস্তিন সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই, তাদের উদ্দেশ্য আরও ব্যাপক। আমরা মুসলমানদের উচিত, যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের এই নীলনকশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আমরা এখানে শান্তিতে থাকি, তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাস্তবতা জানানো আমাদের দায়িত্ব।”
মিছিলে অংশ নেওয়া পোল্যান্ডের ইব্রাহিম পোলাচিক বলেন, “ফিলিস্তিনের জন্য আয়োজিত এই মহামিছিল মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য প্রত্যেকের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।”
তিনি বলেন, “আমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে, যেখানে একজন মুসলমান নিপীড়িত হয়, সেখানেই আমার হৃদয় কাঁপে। আমরা মুসলমানরা একটি দেহের অঙ্গের মতো। ফিলিস্তিন আমাদেরই বিষয়, কারণ মসজিদে আকসা আমাদের প্রথম কিবলা। একে মুক্ত করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।”
সিরিয়ার আহমাদ সিরহান বলেন, “আমরা, যারা ফিলিস্তিনিদের কষ্ট সবচেয়ে ভালো বুঝি, বলতে পারি—আমাদের অন্তর জ্বলছে। যেভাবে সিরিয়া মুক্ত হয়েছে, ইনশাআল্লাহ ফিলিস্তিনও খুব দ্রুত মুক্ত হবে। আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের পাশে সবসময় ছিলাম, থাকব।”
সূত্র : ইয়েনি শাফাক