মঙ্গলবার | ৪ নভেম্বর | ২০২৫

নিউইয়কের মেয়র নির্বাচন: এগিয়ে মুসলিম প্রার্থী মামদানি

আর কয়েক ঘণ্টা পরই জানা যাবে কে হচ্ছেন নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এরপরই ফল ঘোষণা হবে। শহরে প্রায় ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে এরই মধ্যে প্রায় সাত লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার নিউ ইয়র্কবাসী আগাম ভোট দিয়েছেন। তাতেও এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জোহরান মামদানি। শেষ পর্যন্ত জিতলে তিনি হবেন নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তান জোহরান মামদানি জন্মেছেন উগান্ডায়, কিন্তু বেড়ে উঠেছেন নিউ ইয়র্কে। বাংলাদেশিরা তাকে নিজেদের প্রার্থীর মতোই দেখছেন। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের নির্বাচনের মতোই উৎসবের আমেজ এখন নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি পাড়াগুলোয়।

জোহরান মামদানি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেকেই এখানে আছেন। যেমন বাংলাদেশি আঙ্কেলরা। বাংলাদেশি তরুণদের মতো তারাও আমাদের পাশে আছেন।’

মাত্র ৩৩ বছর বয়সী স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান প্রগতিশীল রাজনীতির পরিচিত মুখ। তার বার্তা স্পষ্ট, এমন এক মানবিক শহর, যেখানে গণপরিবহন, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা থাকবে সকলের নাগালে। মুসলিমরাও অন্য সবার মতো মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে।

মামদানি বলেন, ‘আমি এমন কোনো সিটি হল বানাবো না, যেখানে নিউ ইয়র্করা শুধু বসে থাকবে। এমন সিটি হল বানাবো যেখানে এসে সবাই অনুভব করবে সরকার তাদের সমস্যা বুঝতে পারে, তাদের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা করে। তাদের পরিচয় যাই হোক না কেন, সরকার তাদের জন্য লড়াই করবে।’

৩৭তম মেয়র নির্বাচন চলছে ইতিহাসখ্যাত নিউইয়র্ক সিটিতে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী। প্রায় চারশো বছরের ইতিহাসে এ শহরে কখনো কোনো মুসলিম, এমনকি কোনো এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র নির্বাচিত হননি।

বর্তমানে শহরের প্রায় ৯ শতাংশ ভোটার মুসলিম, আর এশীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের হার ২০ শতাংশের বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভোটাররাই এবার ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন।

মামদানি বলেন, ‘এখানকার প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা মুসলিম। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ যা চায়, মুসলিমরাও তাই চায় সমান অধিকার ও সম্মান। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

তবে শেষ মুহূর্তে সমীকরণ বদলেছে; ডেমোক্রেটিক মেয়র এরিক এডামস প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন দিয়েছেন। এরিকের মুসলিমবিরোধী বক্তব্য ও মিডিয়ার চাপ জোহরানের প্রচারণায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মোদিপন্থি ভারতীয়রাও জোহরের বিরোধিতা করছেন। সবার লক্ষ্য মুসলিম ও প্রগতিশীল প্রার্থীকে আটকানো।

তবে জোহরানের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেলিব্রিটি রাজনীতিক বার্নি স্যান্ডার্স, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো, ডেমোক্র্যাট নেতা হেকিম জেফরিস এবং নিউ ইয়র্কের গভর্নরও। শেষ মুহূর্তে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমর্থন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মন জয় করতে সাহায্য করতে পারে।

নিউ ইয়র্কের এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল রাজনৈতিক শক্তির নয়, এটি সংস্কৃতি, ধর্ম ও প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বের এক পরীক্ষা। এখন দেখার বিষয়, ইতিহাসের পাতায় সত্যিই কি প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে জায়গা করে নেন জোহরান মামদানি।

spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img