কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবিতে আগামী ১৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদ।
সে সম্মেলনের পূর্ব প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও সার্বিক অবস্থা গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বক্তরা জানান, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ দেশের নব্বই শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে- মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মানা ইসলাম বিরোধী; তাই কাদিয়ানিরা মুসলমান হওয়ার প্রশ্নই আসে না বরং তারা অমুসলিম কাফের। কিন্ত আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে সাপ্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কাদিয়ানিরা মুসলমান পরিচয়ে নিজেদের মতবাদ প্রচার করে সাধারণ মানুষকে ঈমান থেকে বিচ্যুত করছে। তারা নিজেদের উপাসনালয়কে “মসজিদ” নামে চালিয়ে দিয়ে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। অনেক স্থানে কাদিয়ানি অনুসারীরা মুসলিম মসজিদের ইমাম সেজে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করছে। তাদের বইপত্র ইসলামী গ্রন্থ হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তারা বলেন, এসকল সমস্যার একমাত্র সমাধান কাদিয়ানিদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে সংখ্যালঘু অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করা। এতে মুসলমানদের ধর্ম যেমন সুরক্ষিত থাকবে, কাদিয়ানিরাও নিরাপদে নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও অটুট থাকবে। কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তাদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারে আইনগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। সংবিধানে আকীদায়ে খতমে নবুয়তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, কুরআন হাদীসের এমন শতাধিক অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর সকলেই এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষ করেছেন যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই শেষ নবী ও রাসূল। তাঁরপর যে কেউ নবুওয়তের দাবি করবে, সে মিথ্যুক ও প্রতারক। কিন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো এই সুস্পষ্ট অকাট্য আকীদার বিপরীতে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্জাগোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী বিশ্বাস করে এবং তার উদ্ভাবিত কুফরি মতবাদকে ইসলাম বলে প্রচার করছে, যা ইসলাম ও খতমে নবুওয়তের পরিপন্থী এবং সুস্পষ্ট ভ্রান্ত বিশ্বাস।কাদিয়ানি মতবাদের সূচনালগ্ন থেকেই ওলামায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহ একে ইসলামের মৌলিক আকীদার পরিপন্থী ঘোষণা করেছেন।
তারা জানান, আন্তর্জাতিক, জাতীয় বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও আদালতও আনুষ্ঠানিক ভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করেছে। ১৯৮৫ সালে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি ফিকহ একাডেমির অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়, মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়ত দাবি ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট কুফর। তাই কাদিয়ানিরা মুরতাদ ও অমুসলিম। ১৯৮৯ সালে ওআইসি বাগদাদ সম্মেলনে সর্ব সম্মতি ক্রমে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। ১৯৩৫ সালে বৃটিশ ভারতের ভাওয়ালপুর আদালত দীর্ঘ দশ বছর শুনানির পর রায় দেয় কাদিয়ানিরা ইসলাম থেকে বিচ্যুত ও কাফের। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত লাহোর, কোয়েটা ও সুপ্রিম কোর্টসহ একাধিক আদালত কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়। ১৯৮৬ ও ১৯৯৩ বাংলাদেশের হাইকোর্ট দুই দফায় কাদিয়ানিদের অমুসলিম হিসেবে উল্লেখ করে এবং শেষ নবীর পরে নবুওয়ত দাবিকে কুফরি মতবাদ বলে রায় প্রদান করে। ১৯৭৪ সালে বত্রিশ দিনব্যাপী শুনানির পর পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করে। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক আইন করে তাদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এসময়, দলমত নির্বিশেষে আগামী ১৫ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনকে সফল করার আহ্বান জানান বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা বাহা উদদীন যাকারিয়া, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা রশীদ আহমাদ, মুফতি শুয়াইব ইব্রাহিম, মুফতি মোহাম্মদ আলী আফতাব নগর, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ আজহারী, মাওলানা নুর হোসাইন নুরানী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ কাসেমী,মুফতি আরিফ বিল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আব্দুল মজিদ, মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, মুফতি শফিক সাদী, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী ও মাওলানা রাশেদ বিন নূর।









