শনিবার, জুন ৭, ২০২৫

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আফগান আমিরুল মুমিনীনের শুভেচ্ছা বার্তা

spot_imgspot_img

পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ প্রধান বা আমিরুল মুমিনীন শায়েখ হেবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।

বুধবার (৪ জুন) পবিত্র হজ্ব ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়।

বার্তায় তিনি সকলকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও হাজ্বীদের নিকট দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি ইসলামী বিশ্বাস, কুরবানীর চেতনা, শরিয়াহর গুরুত্ব, মুসলিম উম্মাহর সামষ্টিক দায়িত্ব, আফগানিস্তানের মন্ত্রী, আলেম-ওলামা সহ সর্বস্তরের জনগণের দায়দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে নসিহত ও দিকনির্দেশনা দেন।

হামদ, সানা, তাকবীরের মাধ্যমে তিনি তার বার্তা শুরু করেন। কুরবানী, নামাজ, হজ্ব ও তাওহীদের গুরুত্ব সম্বলিত আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরবানীর সুন্নাহকে তুলে ধরেন। মহান আল্লাহর নিকট কুরবানী কতটা প্রিয় তা বর্ণনা করেন। কুরবানীর প্রকৃত চেতনা হিসেবে ইখলাস (নিষ্ঠা), তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) এবং পরিপূর্ণ আনুগত্যের কথা তুলে ধরেন।

শরিয়াহ পুন:প্রতিষ্ঠায় সকলের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা স্মরণ করেন। আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন। শরিয়াহ শাসন ধরে রাখতে সকলকে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতি জোর দেন।

আলেম-ওলামাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, দ্বীন প্রচার ও সত্য কথা বলার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব আলেমদের। তারা যেনো কোন ভয় এবং লোভ-লালসার বশবর্তী না হোন। কোনো ধরণের ভয়ভীতি ও লোভ-লালসা ছাড়াই শরিয়াহর বিধান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি অন্যান্য আসমানী ধর্মের আলেমদের উদাহরণ টেনে আনেন, যারা দুনিয়াবি স্বার্থে দ্বীনকে বিকৃত করেছিলো।

শাসক ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের ব্যাপারে বলেন, তারা যদি দ্বীন অনুযায়ী চলেন, তাহলে জনগণও সৎ পথে থাকবে। এই প্রসঙ্গে তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) এর কিছু বর্ণনা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের উদাহরণ টেনে আনেন। এর মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তুলেন যে, ইসলামী নেতৃত্ব ও শাসনের স্থায়িত্ব শরিয়াহর আনুগত্যের সাথে জড়িত।

বিচারব্যবস্থা ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিচারকদেরকে নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার কায়েম ও নির্যাতিতদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। রায় প্রদানে সততা অবলম্বন করতে হবে। কারো প্রতি নূন্যতম জুলুম করা যাবে না। কোনো প্রকারের অমানবিক আচরণ করা যাবে না, চায় সে বাদী হোক কিংবা বিবাদী। যারা সমস্যা নিয়ে আসবে, তা যত ছোটই হোক না কেনো, তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বরং দ্রুততম সময়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া হজ্ব ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়, ‘আমর বিল মা’রূফ ও নাহী আনিল মুনকার মন্ত্রণালয়’, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শরণার্থী মন্ত্রণালয়কেও তিনি তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বিশেষত, আমর-নাহী মন্ত্রণালয়কে দায়িত্বের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা প্রসঙ্গে বলেন,
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যে, তারা যেনো দেশকে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার পথে নিয়ে যান। যেনো আমাদের দেশ পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হতে পারে।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সম্পদ ও অর্থনৈতিক শক্তিকে তিনি বর্তমান যুগের মূল হাতিয়ার বলে উল্লেখ করেন। তাই শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন। আফগান শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের এতে অবদান রাখতে জোর দেন। অর্থনৈতিক দপ্তরগুলোকে তিনি এর অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেন। এছাড়া উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার প্রতি জোর দেন।

বার্তায় শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দায়-দায়িত্ব নিয়েও কথা বলেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সদাচরণ, বিনয় এবং জনসেবার শিক্ষা দেন। শরিয়াহ শাসন ব্যবস্থায় শাসক ও নেতারা জনগণের অভিভাবক এবং পিতার মতো এই নীতিকে স্মরণ করিয়ে দেন।

ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল সহ সবধরণের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদেরকে সময়ের অপচয় থেকে বাঁচতে, জ্ঞানার্জনের প্রতি মনোযোগী হতে এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার নসিহত করছি। উদ্দেশ্যহীন জ্ঞানার্জন, জীবনযাপন ও অহেতুক বিষয়াদি থেকে দূরে থাকার আহবান জানাচ্ছি।

বার্তায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে তিনি ইসরাইল পরিচালিত গণহত্যা ও আগ্রাসনকে ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস মানবিক ট্রাজেডি আখ্যা দেন। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আফগানিস্তান ও ইমারাত সরকারের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। অবিলম্বে এই গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধের দাবী জানান।

এছাড়া বিশ্বের নানা প্রান্তের নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলিমদের রক্ষায় মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

বার্তায় পবিত্র হজ্ব, এর মাহাত্ম্য ও শিক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে হাজ্বীদের কাছে নিজেদের ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের জন্য দোয়া কামনা করেন। বলেন, চলতি বছর প্রায় ৩০ হাজার আফগান হজ্বের মতো মহান ইবাদাত পালন করতে বাইতুল্লাহ-য় গিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে এবং বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে আগত সকল হাজ্বীদের কাছে দোয়া কামনা করছি, তারা যেনো আমাদের জন্য ও বিশ্বের সকল মুসলিমের জন্য দোয়া করেন।

পরিশেষে তিনি সকলকে আবার পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানান। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া করেন। আল্লাহ পাক যেনো সকলের আমল কবুল করে নেন সেই প্রার্থনাও করেন।

সূত্র: আল ইমারাহ

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img