ইসরাইলি ওয়ালা ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, গাজ্জা ও লেবাননে টানা যুদ্ধের মাসগুলোতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক ইসরাইলি সৈন্য আত্মহত্যা করেছে। সৈন্যটি যুদ্ধক্ষেত্রের বিভীষিকাময় দৃশ্য ও দেহের পচা গন্ধে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
ওয়ালা জানায়, ওই সৈন্যের মানসিক বিপর্যয়ের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুর পর থেকে। এরপর সে গাজ্জা ও লেবাননের ফ্রন্টে টানা দায়িত্ব পালন করে আসছিল এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে।
সৈন্যের পরিবার জানায়, “আমাদের ছেলে যুদ্ধক্ষেত্রে বারবার মৃতদেহের গন্ধের কথা বলত। প্রতিদিন যে ভয়াবহতা ও পৈশাচিক দৃশ্য দেখতে হতো, তা তাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালে সে গাজ্জা ও লেবানন ফ্রন্ট থেকে নিহত সৈন্যদের মৃতদেহ সরিয়ে আনত।”
ওয়ালার তথ্যানুযায়ী, ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত এই আত্মহত্যাকারী সৈন্যকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
ইসরাইলি বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মানসিক সমস্যাজনিত কারণে আত্মহত্যাকারী সৈন্যের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে পৌঁছেছে।
ইসরাইলি হারেৎস পত্রিকা কয়েক সপ্তাহ আগে সামরিক সূত্রের বরাতে জানায়, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত গাজ্জা যুদ্ধ শুরুর পর অন্তত ৩৫ সৈন্য আত্মহত্যা করেছে। যা আগের ঘোষিত সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি।
হারেৎস আরও জানায়, সেনাবাহিনী চলতি বছরের আত্মহত্যার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে না। তবে সূত্রমতে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে আরও ৭ সৈন্য আত্মহত্যা করেছে, এবং এর পেছনে যুদ্ধ চলতে থাকার মানসিক চাপকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া জানানো হয়, যুদ্ধ শুরুর পর আত্মহত্যাকারী বহু সৈন্যকে কোনো সামরিক সৎকার বা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া দাফন করা হয়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারির শুরুতে ইসরাইলি সামরিক রেডিও জানিয়েছিল, তখন পর্যন্ত ২৮ সৈন্য আত্মহত্যা করেছে, যাদের মধ্যে ১৬ জন রিজার্ভ বাহিনীর।
হারেৎস পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, সেনাবাহিনী এমন সৈন্যদেরও রিজার্ভে নিয়োগ দিচ্ছে, যারা মানসিক রোগে ভুগছে বা চিকিৎসাধীন। এমনকি যাদের মানসিক রোগের কারণে অবসর দেওয়া হয়েছিল, তারাও নিয়োগ পাচ্ছে সৈন্য সংকটের কারণে।
সূত্র জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর ৯ হাজারের বেশি সৈন্য মানসিক চিকিৎসা নিচ্ছে।
এক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বাধ্য হয়ে মানসিকভাবে অস্বাভাবিক সৈন্যদেরও নিই, কারণ অনেক সৈন্য যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। আমরা মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কঠোরভাবে করলে সেনাবাহিনী খালি হয়ে যাবে—এটাই আমাদের ভয়।”
তিনি আরও বলেন, “গাজ্জায় রিজার্ভ বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে সেনাবাহিনীর কাছে এসেছে। তবু তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। আমরা যা আছে, তাই নিয়ে লড়ছি।”
২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরাইলি ইয়েদিয়োত আহারোনোত পত্রিকা জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসা আহত সৈন্যদের ৪৩ শতাংশ বা প্রায় ৫২০০ জন পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছে।
প্রতিবেদন বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১ লাখ মানুষ চিকিৎসা নেবে, যাদের অর্ধেক পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবে।
এছাড়া গাজ্জা থেকে ফিরে মানসিক চিকিৎসা পাওয়া ১৫ শতাংশ স্থায়ী সৈন্য আর যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরতে পারেনি। হাজার হাজার সৈন্য সেনাবাহিনীর গড়া বিশেষ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে এবং স্বীকৃত প্রতিবন্ধীদের এক-তৃতীয়াংশ PTSD আক্রান্ত।
সূত্র : আলজাজিরা