ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনো সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের মধ্যে এ হার অনেক বেশি।
সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে এ চিত্র।
আমেরিকা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট শিব্বির আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
জানা গেছে, গত ১ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ও প্যানেল ঘোষণার আগেই এ জরিপ করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৮৪% ডাকসুতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলেও জানিয়েছেন। যদিও প্রায় ১৩% শিক্ষার্থী মনে করেন না নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
জরিপ অনুযায়ী, নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে (ভিপি) ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৩২ শতাংশ এমনটি মনে করেন। ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী জয়ী হবেন বলে মনে করেন ৭% ভোটার। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে রয়েছেন ২২%। আর ৩৪% ভোটার এ বিষয়ে কোনো মত জানাতে রাজি হননি। ভিপি পদে মতামত না জানানো ভোটারদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৫৪%, পুরুষ শিক্ষার্থীদের হার ২৪%।
জরিপ অনুযায়ী, প্যানেলের তুলনায় যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিতে চান ৮২% ভোটার। ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছেন, ব্যক্তিগত পরিচয় মূখ্য নয়, তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। নেতা হওয়ার জন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া জরুরি বলেও মনে করছেন তারা। এ ছাড়া পুরুষদের তুলনায় নারী ভোটাররা এটিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। আর ৫৮% ভোটার ব্যক্তিজীবনে একাডেমিক ও অ্যাক্টিভিজমে ভালো সমন্বয় করা প্রার্থীদের গুরুত্ব দিবেন।
এ ছাড়া ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর মধ্যে সততা, ভালো সংগঠক, ধার্মিক, প্রগতিশীল, গুড সেন্স অব হিউমার এবং জুলাই আন্দোলনে ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে চান ভোটাররা। আর ব্যক্তিত্বহীন, মাদকাসক্ত, মিথ্যাবাদী, যৌন কেলেঙ্কারি আছে, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ছাত্র নির্যাতনে জড়িত, ধর্মবিদ্বেষী ও বদমেজাজিদের ভোট দিবেন না তারা।
জরিপে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নিপীড়নের তথ্যও উঠে এসেছে। সোচ্চারের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছেলেদের মধ্যে এর পরিমাণ ৫৮%। এ ছাড়া স্বচক্ষে অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন ৬৯ শতাংশ। ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৮১ শতাংশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আর জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩% শিক্ষার্থী মনে করেন, ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে পারবেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডাকসু প্রতিনিধিদের কাছে শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাগুলো হচ্ছে, গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ও নির্যাতনমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, বহিরাগতদের আনাগোনা কমানো, আবাসন ও খাদ্য সংকট দূরীকরণ, অ্যাকাডেমিক পরিবেশ উন্নীতকরণ এবং শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক প্রতিনিধিত্ব, যেখানে দলের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য পাবে।
দুনিয়ার কোথাও ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নির্যাতিত হওয়ার এমন নজির নেই জানিয়ে সোচ্চারের প্রেসিডেন্ট শিব্বির আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোচ্চারের করা জরিপে উঠে এসেছে ৪৫% শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ছেলেদের মধ্যে এর পরিমান ৫৮%। ছেলেদের হলগুলোতে নির্যাতনের ভয়াবহতা কত ছিলো এটার ধারণা পাওয়া যাবে এখানে। স্বচক্ষে অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছে ৬৯%। ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৮১%। দুটো কম্বাইন্ড করে অ্যাক্টিভলি বা প্যাসিভলি নির্যাতিত হয়েছে ৭২% শিক্ষার্থী।’
তিনি আরও বলেন, এই জরিপের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং পছন্দ-অপছন্দগুলো উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্যাতনমুক্ত ক্যাম্পাস ও গণরুম-গেস্টরুম কালচারমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মনে করে যে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করা সম্ভব। ডাকসু নিয়মিত হোক এবং দলের উর্ধ্বে ছাত্রছাত্রীরা প্রাধান্য পাক এটাও তাদের একটা চাওয়া।