বৃহস্পতিবার | ১১ ডিসেম্বর | ২০২৫

মুক্ত সিরিয়া এখন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের পথে এগোচ্ছে: আল শার’আ

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল শর’আর আল জুলানী বলেছেন, মুক্ত সিরিয়া এখন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের পথে এগোচ্ছে — যে রাষ্ট্র তার গৌরবময় অতীতের সঙ্গে যুক্ত, ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী এবং আরব, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার স্বাভাবিক অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়া বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকীতে দামেস্কের কনফারেন্স প্যালেসে ‘মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ২০২৪ সালে এদিনেই স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতন ঘটিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করে সুন্নি মুসলিম যোদ্ধারা। যাদের প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমদ আল শার’আ।

প্রেসিডেন্ট আল-শারাআ বলেন, ক্ষমতাচ্যুত শাসনব্যবস্থার যুগ ছিল জাতির ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। অত্যাচারী শাসক কিছু সময় ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, কিন্তু দ্রুত পতনের পরই প্রজ্ঞা, সুশীল সংলাপ ও ভ্রাতৃত্বের আলো আবারও উদ্ভাসিত হয়।

তিনি বলেন, মাত্র এক বছরেই সিরিয়াকে নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি করুণা থেকে বদলে প্রশংসা ও গর্বে পরিণত হয়েছে। দামেস্ক হৃদয়ের কেন্দ্রবিন্দু ও স্বার্থের ভারসাম্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, আলহামদুলিল্লাহ।

সিরিয়া মুক্তির সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা বীরদের, সন্তানের শোকে বিধ্বস্ত হয়েও আশা হারাননি এমন মায়েদের, হারানোর অন্ধকারে বেড়ে ওঠা শিশুদের এবং দীর্ঘ বছরের নিপীড়ন সহ্য করা মহান সিরিয়ান জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আপনারাই ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু, আপনারাই বীরত্বের প্রতীক, স্বৈরশাসন ও নিপীড়ন থেকে সিরিয়ার মুক্তি এবং মাতৃভূমির তার জনগণের কাছে ফিরে আসার এই দিন আপনাদেরই বিজয়।

সিরিয়া বিপ্লবের এই প্রধান নেতা বলেন, পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে দামেস্ককে তার পরিচয়, সভ্যতা ও ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু চাঁদ কি মুখ লুকাতে পারে, সূর্য কি আলো আড়াল করতে পারে? দামেস্ক সেই নগরী, যেখান থেকেই এক সময় মানবসভ্যতা এগিয়েছিল এবং এখান থেকেই তা আবারও উঠবে। এখানকার মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম করুণা, বিশ্বস্ততা, ন্যায় ও প্রজ্ঞার মানে শিখে এসেছে।

শামের জনগণের সাহস ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা আগেই বুঝেছিল, অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়, স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয়, আর ধৈর্যের পরে আসে বিজয়।

স্বৈরাচার আল-আসাদ পরিবারের শাসনব্যবস্থা নিয়ে তিনি আরও বলেন, পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থা জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, ভয় ছড়িয়েছে, নাগরিকত্বকে দাসত্বের অস্ত্রে পরিণত করেছে এবং দেশকে সব ক্ষেত্রেই সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল। তারা আইনহীনতা ও দুর্নীতির একটি ব্যবস্থা গড়েছিল, যেখানে স্বাধীন মতপ্রকাশ অপরাধ, সৃষ্টিশীলতা লজ্জার বিষয় এবং দেশপ্রেম এক বোঝা ছিল।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, স্বাধীনতার প্রভাতে সেই অন্ধকার উত্তরাধিকারের সঙ্গে ঐতিহাসিক বিচ্ছেদ ঘটানো হয়েছে। “আমরা স্বৈরাচারকে পেছনে ফেলে ন্যায়, নাগরিকত্ব, সহাবস্থান ও সৃজনশীলতার ভিত্তিতে নতুন সিরিয়া গড়ছি।”

তিনি বলেন, সাবেক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবসান ঘটলেও নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। (সে লাড়াই) কাজ, সততা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লড়াই। বছরের পর বছর নিপীড়নের পর জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। আমাদের নীতি হোক সততা, অঙ্গীকার হোক উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণ।

তিনি আরও বলেন, মুক্তির পর থেকেই বিভিন্ন প্রদেশ সফর করে জনগণের চাহিদা ও দাবি শোনা হয়েছে এবং ইতিহাসে শিকড় গাঁথা একটি শক্তিশালী সিরিয়া গড়ার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হয়েছে। সিরিয়া ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার যথাযথ অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে।

তিনি বলেন, কূটনীতিতে সিরিয়া এখন একটি নতুন প্রতিচ্ছবি গড়ে তুলেছে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে। জ্বালানি, বন্দর, বিমানবন্দর, রিয়েল এস্টেট ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে বন্ধুপ্রীতম দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে ওঠায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে আসছে।

জীবনযাত্রা ও কল্যাণ নীতির বিষয়ে আল-শর’আ বলেন, আয় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে, ভোগান্তি লাঘব করা হয়েছে এবং একটি আরও স্থিতিশীল ও ন্যায়সংগত পরিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন সামরিক শক্তিকে একত্র করে একটি পেশাদার, মাতৃভূমির প্রতি আনুগত্যশীল জাতীয় সেনাবাহিনী গঠন করা হয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে আরও মজবুত করেছে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, নতুন সিরিয়া গঠনে সরকার পরিবর্তনকালীন ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে এবং ভুক্তভোগীদের অধিকার রক্ষা করা হবে। সত্য জানার অধিকার, প্রশ্ন করার অধিকার এবং জবাবদিহি বা পুনর্মিলন এগুলোই রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও নাগরিক রাষ্ট্র সম্পর্কের ভিত্তি।

নিখোঁজদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কখনো তাদের ভুলব না। এটি এমন এক মানবিক অগ্রাধিকার, যেখানে কোনো আপস নেই। আমরা সত্য অনুসন্ধানে অবিচল থাকব।

ভাষণ শেষে তিনি বলেন, “প্রিয় সিরিয়ান জনগণ, আপনারা প্রমাণ করেছেন বিজয় কেবল শুরু। ন্যায়, দয়া, পরিশ্রম ও কর্মের মাধ্যমেই এই বিজয়কে দায়িত্বে পরিণত করুন এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত দেশের কাতারে তুলুন।”

সূত্র: সানা নিউজ

spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img