ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের স্পাইওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করেছে ইতালি।
মঙ্গলবার (১০ জুন) মিডল ইস্ট মনিটরের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, ইতালি সরকারের বিরুদ্ধে ইসরাইলী স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিরোধীদের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক ও আলাপচারিতায় আড়িপাতার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট ইসরাইলী স্পাইওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যারাগনের সাথে থাকা ইতালির চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকার ও প্রতিষ্ঠান দু’পক্ষই চুক্তি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিতে দেখা যায়, যা ইতালির বিরোধী দলগুলোর কড়া সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এফএনএসআই (FNSI) নামক ইতালির সাংবাদিকদের একটি ফেডারেশন এই ঘটনার সত্যতা নিরূপণের জন্য প্রসিকিউটরদের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
মেটার হোয়াটসঅ্যাপ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে ওই স্পাইওয়্যার প্রতিষ্ঠান তাদের অনেক ব্যবহারকারীর উপর সাইবার হামলা চালিয়েছে। ইতালির এক সাংবাদিক এবং সমুদ্র থেকে অভিবাসী উদ্ধারের দাতব্য সংস্থা মেডিটারানিয়ার সদস্যরা, যারা প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সমালোচক হিসেবে পরিচিত তারাও সাইবার হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
সরকার ফেব্রুয়ারিতে জানায়, ৭জন ইতালিয়ান মোবাইল ব্যবহারকারী স্পাইওয়্যারের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন। সেই সময় সরকার তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি সংস্থাকে বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছিলো।
পার্লামেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি কোপাসির (COPASIR) এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর ইতালির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইসরাইলের প্যারাগনের সাথে প্রথমে চুক্তি স্থগিত করে, পরবর্তীতে যা বাতিল হয়। তবে কখন চুক্তিটি বাতিল হয়েছে তা এতে স্পষ্ট করা হয়নি। ১২ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে সরকার জানিয়েছিলো যে, চুক্তিটি তখনও কার্যকর ছিলো।
কোপাসির (COPASIR) আরো জানিয়েছে, ফ্যান পেজ (Fanpage) ওয়েবসাইটের সম্পাদক ফ্রান্সেস্কো ক্যানচেলাতো, যিনি স্পাইওয়্যারে নজরদারির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
ফ্যান পেজে (Fanpage) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্যারাগন জানায়, ক্যানচেলাতোর অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর তারা ইতালিকে স্পাইওয়্যার সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং সরকারকে এই বিষয়ে যৌথ তদন্তের প্রস্তাব দিলেও সরকার তা গ্রহণ করেনি।
তবে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবিষয়ে প্যারাগনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী মেলোনির কার্যালয়ও এবিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
বিরোধী রাজনীতিকরা সরকারকে এই বিষয়ে পার্লামেন্টে ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কোপাসির (COPASIR) জানিয়েছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইতালির অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্যারাগনের সঙ্গে চুক্তি করে এবং প্রসিকিউটরের অনুমতিক্রমে খুব সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির উপর স্পাইওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
পলাতকদের অনুসন্ধান, অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদ, সংগঠিত অপরাধ, জ্বালানি চোরাচালান এবং গুপ্তচর বিরোধী কার্যক্রমে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছিলো।
কমিটি জানিয়েছে, মেডিটারানিয়া দাতব্য সংস্থার সদস্যদের উপর মানবাধিকার কর্মী হিসেবে নয় বরং তাদের কার্যক্রমের সাথে অবৈধ অভিবাসনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেই সন্দেহে সরকারের অনুমতিক্রমে নজরদারি চালানো হয়েছিলো।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মেডিটারানিয়ার ২জন কর্মী লুকা কাসারিনি ও বেপ্পে কাচ্চিয়ার উপর নজরদারি চালানোর জন্য ইতালি সরকারের গোপন তথ্য সংক্রান্ত প্রধান প্রতিনিধি আলফ্রেদো মানতোভানো ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্যারাগনের স্পাইওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
তবে সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাকেও তাৎক্ষণিকভাবে এবিষয়ে মন্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি।
গত মাসে একটি সিসিলিয়ান আদালত মেডিটারানিয়ার ছয় সদস্যকে, যার মধ্যে কাসারিনি ও কাচ্চিয়া রয়েছেন, অবৈধ অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয়। এটিই বিশ্বের প্রথম ঘটনা যেখানে একটি উদ্ধার জাহাজের কর্মীদের এমন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত উদ্ধারকারীরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত সবধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।