শনিবার মাগরিবের নামাজের পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক বেয়াজিত স্কয়ারে হাজারো ফিলিস্তিন-সমর্থক বিক্ষোভকারী সমবেত হন। তারা গাজ্জায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যা ও জোরপূর্বক অনাহারের নীতি বন্ধের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে হায়া সোফিয়া মসজিদের দিকে অগ্রসর হন।
এ বিক্ষোভে বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধি এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন। তারা গাজ্জায় অব্যাহত সহিংসতা, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। আয়োজকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরাইলি হামলা চালিয়ে গাজ্জায় ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এই হামলায় গোটা অঞ্চলকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করেছে এবং খাদ্য সংকট ও অনাহারে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজ্জায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাও চলছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কানাডায় জন্ম নেওয়া শিক্ষিকা জেনি মোলেনডাইক দিভলেলি বলেন, “সবাই জানে যে এখানে গণহত্যা চলছে। কিন্তু এখন ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর জোরপূর্বক অনাহার চালানো হচ্ছে, যা প্রতিদিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রতিদিন ডজন ডজন, হয়তো শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে এবং যা পারি তা করতে হবে।”
রক্ষণশীল খ্রিস্টান পরিবারে বেড়ে ওঠা জেনি ২০০৬ সালে ব্যাপক ব্যক্তিগত গবেষণার পর ইসলাম গ্রহণ করেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি ইস্তাম্বুলে বসবাস করছেন। তিনি প্রায়ই তার পাঁচ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ইংরেজি ও তুর্কি ভাষায় ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদের জীবন নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন, বিশেষ করে তরুণদের জন্য।
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি বিশ্বব্যাপী জনমত বদলেছে। আরও বেশি সংগঠন কথা বলছে, সংবাদমাধ্যম পরিবর্তন হচ্ছে, যারা আগে ফিলিস্তিনবিরোধী ছিলেন তারাও মত বদলাচ্ছেন। এখন আর এটি অস্বীকার করা সম্ভব নয়, যা আমাকে আশাবাদী করে।”
চার বছর ধরে ইস্তাম্বুলে বসবাসরত তিউনিসীয় বিক্ষোভকারী মোহাম্মদ বেন এলশেখ বলেন, “প্রথমেই আমি গাজ্জা ও হামাসের ভাইদের সালাম জানাই। আল্লাহ তাদের সহায় হোন। আমরা শিগগিরই মুক্ত হবো।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতাকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, “লজ্জার বিষয় যে শিশুরা মারা যাচ্ছে। পুরো গাজ্জা ধ্বংস হচ্ছে, হত্যা, অনাহার, বন্দিত্ব—সব চলছে। কিন্তু বিশ্ব নীরব, রাষ্ট্রপ্রধানরা নীরব। আমরা মুসলিমরা এগোচ্ছি, কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয়।”
সূত্র : আনাদোলু









