ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের হামলায় সহকর্মী সাংবাদিক আনাস জামাল আশ-শরীফ ও অন্যান্যদের মৃত্যুতে আল জাজিরার সাবেক গাজ্জা প্রতিনিধি সাংবাদিক ওয়ায়েল আদ-দাহদুহ শোক প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (১১ আগস্ট) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারে স্থানান্তরিত আল জাজিরার ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওয়ায়েল আল-দাহদুহ গাজ্জায় সদ্য নিহত সহকর্মী আনাস আল-শরীফ সহ অন্যান্য সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় তিনি ইসরাইল পরিচালিত গণহত্যা অভিযানে পেশাগত জীবনের কষ্ট ও সহকর্মী হারানোর বেদনা ব্যক্ত করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, “সাংবাদিক ও ফিলিস্তিনি হিসেবে গাজ্জায় আমাদের নিয়তি কতই না কঠিন। এক শহীদ অপর শহীদের সঙ্গে বসবাস করে, শহীদকে বিদায় জানায় এবং শহীদকে দাফন করে। আনাস, মুহাম্মদ ও আমার সহকর্মীরা! আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহম করুন। তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন করেছো এবং সেই আকাঙ্ক্ষিত প্রান্তে পৌঁছেছো যা সবসময় তোমাদের চোখের সামনে ছিলো।”
আল জাজিরার বরাতে জানা গেছে, গাজ্জার আশ-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থিত সাংবাদিকদের তাঁবুতে পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালায় ইসরাইল। ইসরাইলী গোলার আঘাতে মৃত্যু হয় দাহদুহ পরবর্তী গাজ্জায় আল জাজিরার সবচেয়ে পরিচিত মুখ, সাংবাদিক আনাস জামাল আশ-শরীফের। এতে আরো ৪ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, মুহাম্মদ কুরাইকা, ফটো সাংবাদিক ইবরাহীম জহির ও মুমিন আলিওয়া এবং সহযোগী মুহাম্মদ নওফেল।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ইসরাইলী সেনাবাহিনী এর আগে গাজ্জার সাংবাদিকদের, বিশেষত আল জাজিরার আনাস আশ-শরীফকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে ব্যাপক উসকানিমূলক অভিযান চালিয়েছিলো। যেনো সে গাজ্জা ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু সদ্য শহীদ হওয়া এই সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে এই প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, “জান্নাত ছাড়া গাজ্জা ছেড়ে আমি আর কোথাও যাবো না।”
ওয়ায়েল দাহদুহ পরবর্তী গাজ্জা থেকে লাইভে আসা আল জাজিরার এই সাংবাদিক শাহাদাত বরণ করার মধ্যদিয়ে কার্যত গাজ্জা ছেড়ে জান্নাতেই পাড়ি জমালেন।
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক ওয়ায়েল হামদান ইবরাহীম আদ-দাহদুহ কাতারে স্থানান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ফিলিস্তিন প্রতিনিধি ছিলেন। আরব বিশ্বে তিনি ‘আবু হামজা’ নামে পরিচিত। শহীদ আনাসের চায়তে তাকেই বেশি আল জাজিরার লাইভে আসতে দেখা যেতো।
২০২৩ এর ৭ অক্টোবর থেকে গাজ্জায় ইসরাইলী গণহত্যা শুরুর পর অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সর্বশেষ আপডেট বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য তিনি পৃথিবী ব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
বিশ্ববাসীর সামনে গাজ্জায় ইসরাইলের বর্বরতার তুলে ধরার জন্য তিনি একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি পান। এমনকি একবার তার অবস্থান লক্ষ্য করে হামলাও চালায় ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সেনারা। গুরুতর আহত হলেও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এরপর লোকজন তাকে ‘গাজী’ উপাধিতে ভূষিত করে।
গাজ্জায় ইসরাইলের ভয়াবহ হামলায় তিনি বেঁচে গেলেও হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনির ন্যায় পৃথক পৃথক ইসরাইলী হামলায় শহীদ হয় তার ২ পুত্র, কন্যা, নাতনী এবং স্ত্রী।
২০২৪ এর ৭ জানুয়ারি থেকে তার পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিক প্রাণঘাতী হামলা শুরু হলে তার বড় সন্তান সাংবাদিক হামজা আদ-দাহদুহ (২৭), ভাতিজা আহমদ (৩০) ও মুহাম্মদ আদ-দাহদুহ নির্মমভাবে প্রাণ হারান। ১৬-১৭ জানুয়ারিতে কাতার ও মিশরীয় সাংবাদিকদের সিন্ডিকেটের তৎপরতায় ওয়ায়েল আদ-দাহদুহকে গাজ্জা থেকে প্রথমে মিশর তারপর কাতারে সরিয়ে আনা হয়। এর আগে তার আরো ৪ সন্তানকে মিশরে নেওয়া হয়।
সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর









