সৌদি আরবের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও স্কলার ড. আবদুল্লাহ ওমর নাসিফ ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রবিবার (১২ অক্টোবর) ৮৬ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জেদ্দার আল-জুফালি মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং আল-আসাদ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি একজন বিজ্ঞ রসায়নবিদ ও ভূতাত্ত্বিক ছিলেন এবং ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার কর্মপরিধি বহু বিস্তৃত ছিলো। তিনি জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছিলেন। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব এবং সৌদি সরকারের শূরা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
কিং আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টাররিলিজিয়াস অ্যান্ড ইন্টারকালচারাল ডায়ালগ এবং কিং আবদুল আজিজ সেন্টার ফর ন্যাশনাল ডায়ালগের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ফয়সল বিন মুয়াম্মার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, আবদুল্লাহ ওমর নাসিফের ইন্তিকালে আমি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি এক গৌরবময় জীবনযাত্রা শেষে পরপারে গমন করেছেন। তার জীবন জ্ঞানচর্চা ও মানবসেবার অসামান্য অবদানে ভরপুর ছিলো।
তার সাথে জাতীয় সংলাপ, বিশ্ব স্কাউট সংস্থা সহ বহুক্ষেত্রে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি সর্বদা ভারসাম্য ও প্রজ্ঞার প্রতীক এবং উচ্চ নৈতিকতার আদর্শ ছিলেন। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব যার সামাজিক ও মানবিক উত্তরাধিকার চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান পদ, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক কাউন্সিল ফর দাওয়াহ অ্যান্ড রিলিফের মহাসচিবের পদ।
তিনি ওয়ার্ল্ড স্কাউট কমিটির সদস্য ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কাউটসের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সৌদি আরবীয় স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগে তিনি অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে সৌদি আরবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইসলামী আদর্শ প্রচার এবং জাতি ও ধর্মের মধ্যে সংলাপ উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
শূরা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তার প্রজ্ঞা, ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও জাতীয় স্বার্থে অঙ্গীকারবদ্ধতার জন্য ব্যাপক শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন।
তিনি নিউ মেক্সিকোর ‘দারুল ইসলাম’, শিকাগোর ‘ইসলামিক কলেজ’ এবং কেমব্রিজের ‘ইসলামিক একাডেমির’ সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে জেনেভা ও সিডনির ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক বিজ্ঞানের ইতিহাস ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাইজারের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি।
এছাড়াও তিনি ১০ বছর ধরে সৌদি ন্যাশনাল ডায়ালগ কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ইসলামিক কাউন্সিল ফর দাওয়াহ অ্যান্ড রিলিফ-এর মহাসচিব, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কাউটসের প্রেসিডেন্ট এবং আবদুল্লাহ বিন ওমর নাসিফ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯১ সালে তিনি ইসলামের সেবায় নেতৃত্ব, ইসলামী শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অবদানের জন্য কিং ফয়সল এওয়ার্ড ফর সার্ভিস টু ইসলাম লাভ করেন।
১৯৩৯ সালে জেদ্দায় জন্মগ্রহণকারী নাসিফ ১৯৬৪ সালে কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে লন্ডন ও আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক সমিতির ফেলো হোন।
সূত্র: আরব নিউজ









