ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল বিজয়ী হওয়ায় ভারতের নীতিনির্ধারকদের মনে গভীর উদ্বেগের জন্ম নিয়েছে। একই সাথে বেড়েছে দুশ্চিন্তা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার আয়োজিত ‘আমরা কি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?’ শীর্ষক আলোচনায় স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেন।
তিনি বলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও, যদি বাংলাদেশের ক্ষমতায় এমন কোনো শক্তি আসে যারা ভারতের মূল স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই।
জামায়াত প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘চিতা’ কখনো তার লক্ষ্য হারায় না। অর্থাৎ অতীতে যাদের কর্মকাণ্ড ভারতের জন্য শঙ্কার কারণ ছিল, ভবিষ্যতেও তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করা ভুল হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় যেই আসুক আমরা তার সঙ্গে কাজ করব, এটি ঠিক আছে। কিন্তু যদি সেই কেউ আপনার স্বার্থবিরোধী কাজ করে, তবে আপনাকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শ্রিংলার বক্তব্য দিল্লির কূটনৈতিক মহলে তীব্র সাড়া ফেলেছে।
এদিকে, ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিজয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক্স বার্তায় তিনি এ নির্বাচনকে ‘আসন্ন দিনগুলোর জন্য একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত’ হিসেবে আখ্যা দেন।
শশী থারুর প্রশ্ন তোলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে কী জামায়াতে ইসলামীর সরকার গঠন দেখা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের এই জয়ের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে কতটুকু পড়বে?
তিনি লেখেন, ভারতের বেশিরভাগ মানুষের কাছে শিবিরের জয় পাওয়া একটি সাধারণ বিষয় মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আসন্ন দিনগুলোর জন্য একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল (বর্তমানে নিষিদ্ধ) আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ের প্রতিই জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। আর যারা এ দুটি দলের ওপর বিরক্ত তারা জামায়াতের দিকে ঝুঁকছেন।
এসময়, জামায়াতে ইসলামী কোনো দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত নয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তিনি প্রশ্ন তুলে আরও লেখেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে এর কেমন প্রভাব পড়বে? নয়াদিল্লিকে কি তাহলে প্রতিবেশী দেশে জামায়াতের সংখ্যাগরিষ্ঠতার (সরকারের) মোকাবিলা করতে হবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জোটের ব্যানারে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) মোট ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতেই জয়ী হয়েছে।