শনিবার, জুন ২১, ২০২৫

১ বছর ধরে সিরিয়া জয়ের পরিকল্পনা করেছেন সুন্নি মুসলমানরা

spot_imgspot_img

স্বৈরাচার আসাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে সিরিয়া জয়ের জন্য অন্তত এক বছর পরিকল্পনা করেছিলেন সুন্নি মুসলমান যোদ্ধারা।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটেনের দৈনিক গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদন তৈরীর জন্য দৈনিক গার্ডিয়ান সিরিয়া বিজয়ী সুন্নি মুসলমান যোদ্ধাদের সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) একজন কমান্ডার এবং সামরিক শাখার সাবেক প্রধান আবু হাসান আল-হামউই এর সঙ্গে কথা বলেছেন।

আবু হাসান আল-হামউই বলেন, ২০১৯ সালে সিরীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী সরকার বিরোধীদের লক্ষ্য করে যে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছিল, সে সময় তারা সর্বপ্রথম সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে একটি বড় ত্রুটি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। আর সেই ত্রুটি ছিল যথাযথ নেতৃত্বের অভাব।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। এটি ছিল আমাদের আন্দোলনের প্রধান দুর্বলতা এবং স্বৈরাচারি সরকারের টিকে থাকার প্রধান ভিত্তি। তাই যখন আমরা বুঝলাম যে আন্দোলনকে সফল করতে হলে যথাযথ নেতৃত্ব লাগবে এবং সবাইকে এক ছাতার নিচে আনতে হবে। তখন থেকেই সেই অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করলাম।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী, রুশ বাহিনী, হিজবুল্লাহ এবং ইরানের সেনবাহিনী। এই যৌথ বাহিনীর ওপর ভর দিয়ে ২০১৬ সালে সুন্নি মুসলমান যোদ্ধাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেন বাশার।

তিনি আরও বলেন, আলেপ্পো হারানোর পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী এবং বিভিন্ন ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটি বা ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে ইদলিব এবং দক্ষিণ সিরিয়া। সেখানেই ‘ইউনিফায়েড ওয়ার রুম’ নামের একটি জোট গঠন করে এইচটিএস। হায়াত তাহরির আল শামস ছাড়াও সেই জোটের সদস্য ছিল ২৫টি সমস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী।

আলেপ্পো হাতছাড়া হওয়ার পর সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবের দিকে সরে যেতে থাকেন বিদ্রোহীরা। ২০১৭ সালে সেখানেই গঠিত হয় এইচটিএস বা হায়াত তাহরির আল শামস। ২০১৯ সালে গঠিত হওয়া ‘ইউনিফায়েড ওয়ার রুম’ সে সময় সরকারপতন অভিযান বা এই সংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরী করতে পারছিলেন না। তখন যৌথ বাহিনীর বিধ্বংসী অভিযানের মুখে টিকে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে পরিস্থিতিতে বদলাতে থাকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে। গাজ্জা উপত্যায় ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ অভিযান শুরু হওয়ায় সিরিয়া থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় বাশারের অন্যতম বিশ্বস্ত মিত্র ইরান। তার আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বস্ত মিত্র রাশিয়া অনেক আগে থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

গার্ডিয়ানকে হামউই জানান, নভেম্বরে সিরিয়ার দুই প্রধান মিত্রের মনোযোগ সরে যাওয়ার পর থেকেই তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা শুরু করেন।

হামউই বলেন, আমরা পরিকল্পনার শুরুর দিকে একটি ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছিলাম- সেটি হলো; আমাদের সবার আগে আলেপ্পোর দখল নিতে হবে। কারণ অতীত ইতিহাস এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে যতক্ষণ পর্যন্ত আলেপ্পোর পতন না ঘটবে, ততক্ষণ দামেস্কের পতন সম্ভব নয়। এছাড়া আমাদের সামনে আর একটি চ্যালেঞ্জ ছিল তেহরান এবং মস্কোর সমরাস্ত্র। যে উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র তারা সিরিয়ার সেনা বাহিনীকে দিয়েছিল, সেসব আমাদের ছিল না। এ অবস্থায় অন্যান্য সমরাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোন, বিশেষ করে সুইসাইড ড্রোন তৈরির দিকে আমরা বিশেষ মনোযোগী হই এবং শাহীন নামে একটি সুইসাইড ড্রোনও প্রস্তুত করি।

তিনি বলেন, “শাহীন-এর অর্থ আরবের বাজপাখি। মাত্র ১২ দিনের অভিযানে আমরা দামেস্ক দখল করতে সক্ষম হয়েছি এবং এক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই শিকারী বাজপাখির মতো আমাদের সহায়তা করেছে শাহীন।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img