বুধবার | ১৭ ডিসেম্বর | ২০২৫

এতিম-বিধবা-যুদ্ধাহতদের অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব : আফগান আমীরুল মুমিনীন

ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের আমীরুল মুমিনীন মাওলানা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বলেছেন, এতিম, বিধবা, যুদ্ধাহত, দরিদ্র, মুহাজির, অভিভাবকহীন পরিবার, মাদকাসক্ত এবং কারাবন্দীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব।

মাওলানা আখুন্দজাদা বলেন, “মানুষের মধ্যে উত্তম তারাই, যাদের উপকার মানুষের কাছে পৌঁছে। ইমারাতে ইসলামিয়া মুসলমানদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ও উকিলের অবস্থানে রয়েছে, মুসলমানদের দীন ও আকিদা রক্ষা করে, মানুষকে দীন ও শরিয়াহ দেখায়, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং এতিম, বিধবা, অসহায় ব্যক্তি ও অভিভাবকহীন পরিবারগুলোর দেখভাল করে।”

আফগানিস্তানের কান্দাহারে তিন দিনব্যাপী একটি সংস্কার সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা ও উলামায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে তিনি এসব কথা বলেন।

দুর্বল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আফগান আমীরুল মুমিনীন বলেন, এতিম, বিধবা, যুদ্ধাহত, দরিদ্র, মুহাজির এবং কারাবন্দীদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, এসব জনগোষ্ঠীর জন্য সেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের মূল দায়িত্বের অংশ।

মাওলানা আখুন্দজাদা বলেন, ইমারাতে ইসলামিয়ার নির্দেশনা ও কার্যক্রম আল্লাহ তাআলার রহম ও দয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, ফরমানের একটি অংশে মানুষের প্রতি দয়া ও সহমর্মিতার নির্দেশনা থাকে, যাতে মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা, মুহাজির, অসহায় ব্যক্তি, যুদ্ধাহত, অভিভাবকহীন পরিবার, এতিম, বিধবা ও মাদকাসক্তদের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বলেন, এ ভিত্তিতেই ইমারাতে ইসলামিয়া জনগণের সহযোগিতা ও সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছে।

মাওলানা আখুন্দজাদা বলেন, শহীদ ও যুদ্ধাহত মন্ত্রণালয় প্রতিবছর এতিম, বিধবা ও যুদ্ধাহতদের জন্য নির্ধারিত মাসিক ভাতা প্রদান করে। একই সঙ্গে ইমারাতে ইসলামিয়া উক্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে, দুই অঙ্গহানি-প্রাপ্ত যুদ্ধাহতদের জন্য গাড়িভাড়া বাবদ অর্থও পরিশোধ করা হবে এবং অবিবাহিত শহীদদের পরিবারকেও সুবিধা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, দারুল ইয়াতিমগুলো এতিমদের লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করে। তিনি বলেন, এতিমদের আরও ভালোভাবে দেখভাল নিশ্চিত করতে এবং হিলাল আহমার যেন অভাবগ্রস্তদের দেখভাল করতে পারে, এর আর্থিক দায়িত্ব ইমারাতে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় দপ্তরের ওপর রয়েছে।

আমীরুল মুমিনীন বলেন, হিলাল আহমার দরিদ্র মানুষ ও স্নায়ুরোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করে।

তিনি আরও বলেন, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এমন আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যা শহরগুলো থেকে অভিভাবকহীন শিশুদের সংগ্রহ করে এবং তাদের সেবা করা হয়।

মাওলানা আখুন্দজাদা বলেন, মাদকবিরোধী দপ্তর মাদকাসক্তদের সংগ্রহ করে এবং তাদের সেবা করে। তিনি বলেন, মাদকাসক্তদের জন্য শিক্ষা ও উপার্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কারাবন্দীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামি ব্যবস্থায় প্রত্যেক মুসলমানের ইজ্জত ও মর্যাদা সুরক্ষিত। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, বন্দীদের নির্যাতন, হয়রানি ও মারধর করা হবে না, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হবে না এবং আদালত ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, ইমারাতে ইসলামিয়া কারাগারের প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে, বন্দীদের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, তাদের শিক্ষা শুরু করতে হবে, বন্দীদের সচেতন করতে হবে, তাদের জ্ঞান শেখাতে হবে এবং কারাগারগুলোকে শিক্ষাকেন্দ্রে রূপান্তর করতে হবে।

বক্তব্যের তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, মানুষের কাজ সময়মতো ও নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে, মানুষের জন্য দরজা বন্ধ করা যাবে না, ধনী ও গরিবের মধ্যে পার্থক্য করা যাবে না এবং জনসেবায় দয়া ও সহানুভূতি বজায় রাখতে হবে।

আমীরুল মুমিনীন বলেন, মানুষকে সুসংবাদ দিতে হবে, তাদের হতাশ করা যাবে না, মানুষের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করা যাবে না এবং তাদের প্রতি রহম ও সহমর্মিতা দেখাতে হবে।

কান্দাহারের তিন দিনব্যাপী সংস্কার সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেমিনারে আফগান হিলাল আহমারের মহাপরিচালক, শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী, জিহাদি মাদরাসাসমূহের মহাপরিচালক, সুপ্রিম কোর্টের সামরিক উপপ্রধান, সুপ্রিম কোর্টের দক্ষিণ-পশ্চিম জোনের বিচারিক উপপ্রধান, কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার প্রধান, ধর্মীয় প্রকাশনা তদারকি ও মূল্যায়ন দপ্তরের প্রধান, শহীদ ও যুদ্ধাহত মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকবিরোধী দপ্তরের উপমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : আরটিএ ও আরিয়ানা নিউজ

spot_img
spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img