রবিবার | ২৪ আগস্ট | ২০২৫

করোনার প্রাদুর্ভাবে ৮০ টি দেশে চিকিৎসা সহায়তা পাঠিয়েছে তুরস্ক

ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম | নাহিয়ান হাসান


বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পেতে ৮০ টি দেশে চিকিৎসা সহায়তা পাঠিয়েছে রজব তাইয়েব এরদোগানের নেতৃত্বাধীন তুরস্ক।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘ফুয়াত ওক্তাই’ বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংহতি প্রচেষ্টায় অবদানের অংশ হিসাবে তুরস্ক ৮০ টি দেশে চিকিৎসা সহায়তা প্রেরণ করেছে।

এক অনলাইন ইন্টারভিউতে ‘ওক্তাই’ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৮০ টি দেশকে সহায়তা করার সুযোগ পেয়েছি। সেই দেশগুলোর মূল চাহিদা ছিল ফেস মাস্ক,হ্যান্ড গ্লাভস এবং ভেন্টিলেটর।

তিনি বলেন, বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ দেশ বা প্রায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি রাষ্ট্র তুরস্কের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সহায়তা স্বরূপ তুরস্কের চিকিৎসা সরঞ্জামাদির দ্বিতীয় চালান লিবিয়ায় এসে পৌঁছেছে।

কূটনৈতিক সূত্র মতে, ত্রিপোলিতে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ‘সেরহাত’ আকসেন ব্যক্তিগতভাবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের জরুরি অবস্থা প্রশাসনের ‘তৌফিক হরিশা’র কাছে মেডিকেল সরঞ্জামাদি হস্তান্তর করেছিলেন।

এছাড়াও তারা তুরস্কের সহায়তার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সহায়তা করার জন্য ‘হারিশা’ আঙ্কারাকে ধন্যবাদ জানায়।

১১ এপ্রিল ভাইরাসটির বিস্তার রোধে তুরস্ক যুদ্ধ-ক্ষতিগ্রস্থ উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে তাদের প্রথম চিকিৎসা সামগ্রীর চালান পাঠিয়েছিল।

আঙ্কারা, তিউনিসিয়ায় চিকিৎসা সহায়তা সম্বলিত তার দ্বিতীয় চালান ও পাঠিয়েছে। যা ৮ ই মে তিউনিসিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। সেই চালানের মধ্যে ছিল সার্জিক্যাল মাস্ক, পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট, জীবাণুনাশক, গগলস, ফেস মাস্ক এবং ফেসশীল্ড।

অন্যদিকে মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের যাতায়াত সহজ করার জন্য তুর্কি সরকার উগান্ডার ‘কোভিড-১৯ জাতীয় টাস্কফোর্সকে’ ১০০টি সাইকেলও অনুদান দিয়েছিল।

উগান্ডায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত কেরেম আল্প বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সাইকেলের চালানটি টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
উল্লেখ্য, দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কোভিড -১৯ মোকাবিলার জন্য ত্রাণ ও বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সামগ্রী জোগাড় করার জন্য টাস্কফোর্স নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

‘আল্প’ বলেছেন, মহামারীকে কার্যকরি ভাবে প্রতিহত করতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে উগান্ডার প্রেসিডেন্টের সহায়তার আহবানে তার রাষ্ট্র তুরষ্ক সাড়া দিয়েছে।

সাইকেলগুলি সেম্বাবুল এবং কিটগাম জেলাগুলিতে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য যাতায়াত সহজ করবে কেনোনা সেখানে লড়াইয়ের সম্মুখভাগে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে পরিবহনের অভাব রয়েছে। ‘আল্পে’র তথ্যমতে, সাইকেল গুলো মহিলা ও পুরুষ উভয়ের উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী রুহাকানা রুগুন্দা কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে যে ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে তা সমর্থন করার জন্য ম্যাসেভেনির আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য তুর্কি জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

উগান্ডায় বর্তমানে ১৬০জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যার মধ্যে ৬৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা শূন্য।

তুরস্কের বেশ কয়েকটি মানবিক সহায়তা সংস্থা দুর্বল উগান্ডীয়দের জন্য খাদ্যসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী প্রদানে অবদান রেখেছে।

শুক্রুবার ন্যাটোর সহযোগী নেতৃত্ব তুর্কী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জাম বিতরণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটি টুইট বার্তা দিয়েছে। এই টুইট বার্তায় তারা আরো উল্লেখ করেছে যে, এধরণের গতিবিধি ন্যাটোকে সমর্থনের একটি বার্তা। এধরণের কার্যক্রম আমাদের সদর দফতরের মিশনটি সম্পাদন করার জন্য ব্যবহার যোগ্য পণ্যের মজুদ তৈরিতে সহায়তা করে।

গত ডিসেম্বরে চীনে এই মহামারীর উদ্ভবের পর কোভিড-১৯ ভাইরাসটি কমপক্ষে ১৮৮ টি দেশ এবং অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসের কবলে পতিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইউরোপ এবং আমেরিকা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত পরিসংখ্যান অনুসারে মহামারীটি বিশ্বব্যাপী ৪.৪ মিলিয়নেরও বেশি লোককে আক্রান্ত করেছে এছাড়াও বিশ্বব্যাপী ৩০০,০০০ এরও বেশি লোক এই মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেছে এবং পুনরায় সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া লোকের সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

তুরস্কে বর্তমানে করোনভাইরাস সংক্রান্ত ১৪৪,৭৪৯ জনেরও বেশি রোগী পাওয়া গিয়েছে। এবং মৃতের সংখ্যা ৪০০৭ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাভুয়েসালু সংহতি তুলে ধরে একটি বক্তব্য দিয়েছেন।

তুরস্কের বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বোর্ডের (ডিইআইকে) আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিয়েত সাভুয়েসালু বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বলেছেন যে করোনভাইরাস মহামারী চলাকালীন অন্যান্য দেশের সাথে দৃঢ় সংহতি, একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য তুরস্ক রাষ্ট্রের ধারণাকে একীভূত করেছে।

তিনি ডিইআইকে সদস্যদের বলেছিলেন যে, ইইউর সাথে দেশটির শুল্ক ইউনিয়নের একটি ধারা নবায়নের পাশাপাশি ভিসা উদারকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতির প্রত্যাশা করছে এখন আঙ্কারা।

তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে তিনি এবং রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়েব এরদোগান উভয়ই তাদের ইউরোপীয় সহযোগীদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

বাইরের দেশগুলিতে তুরস্কের সরবরাহ করা চিকিৎসা সহায়তার কথা উল্লেখ করে সাভুয়োসালু বলেছিলেন, সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রথমবারের মতো আমাদের দেশ সম্পর্কে এই জাতীয় ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা এটা বলছি না যে, এগুলোর দ্বারা সবকিছু সমাধান হয়ে গিয়েছে। হ্যা, তবে এটা বলতে পারি যে একটা ইতিবাচক আবাহ তৈরি হয়েছে।

তুরস্ক এমন এক রাষ্ট্র যারা তাদের মানবিক প্রচেষ্টায় গত দশকে নিজের নাম করে নিয়েছে। প্রতিদিন পৃথিবীর বহু কোণে চিকিৎসা সহায়তা প্যাকেজ প্রেরণ করে ইতোমধ্যে এই রাষ্ট্রটি রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

৩১ জানুয়ারিতে তুরস্ক চীনে প্রথমবার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছিল। সেই সরঞ্জামাদিতে ছিল পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট, ৯৩,৫০০ মেডিকেল মাস্ক, ৫০০ চিকিৎসা প্রতিরক্ষামূলক চশমা এবং ১০,০০০ জীবাণুনাশক সরঞ্জামাদি সহ চীনকে প্রাথমিক চিকিৎসা সরবরাহ করা হয়েছিল।

তুরস্কের সহায়তা প্যাকেজগুলির বেশিরভাগই ছিল মেডিকেল মাস্ক, প্রতিরক্ষামূলক পোশাক-আশাক, হ্যান্ড গ্লাভস এবং জীবাণুনাশক। সমস্ত সরঞ্জাম সামরিক মালিকানাধীন কারখানাগুলিতে এবং সেলাইয়ের ওয়ার্কশপগুলিতে তৈরি করা হয়েছিল যে কারখানা এবং সেলাইয়ের ওয়ার্কশপগুলো সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক ইউনিফর্ম এবং অন্যান্য পোশাক তৈরি করে থাকে।

তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্য পালন করে আসছে যে, তারা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া দেশগুলোতে মানবিক সহায়তা প্রেরণ করছে, এমনকি যাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশও সমস্যার সম্মুখীন হলে তারা সেখানে মানবিক সহায়তা প্রেরণ করে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেশটির ভিত্তি স্থাপনের এক দশক পরে ১৯৩৮ সালে তুরস্ক সুদূর প্রাচ্যে কলেরার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চীনে ওষুধ পাঠিয়েছিল। একইভাবে ১৯৪১ সালে তুরস্ক গ্রীক সেনাবাহিনীর কাছে ওষুধ পাঠিয়েছিল গ্রিসের অনুরোধে। অথচ গ্রিস মুক্তিযুদ্ধের সময় তুরস্কের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান সহ অন্যান্য বহু দেশে তুরস্ক কর্তৃক একই ধরণের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

spot_img

সর্বশেষ

গাজ্জায় বড় ধরনের আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল

ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত গাজ্জায় বড় ধরনের আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্র ইসরাইল।শনিবার (২৩ আগস্ট) কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রকাশিত...

জনগণের একমাত্র মুখপাত্র জাতীয় পার্টি: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি দেশের জনগণের একমাত্র মুখপাত্র বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান (গোলাম মোহাম্মদ) জিএম কাদের।তিনি বলেন, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠির...

তালেবানকে বাদ দিয়ে আফগান বিষয় সংলাপের আয়োজন পাকিস্তানে; শেষমেশ স্থগিত

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য কথিত আফগান সংলাপ স্থগিত করা হয়েছে। আয়োজকরা শুক্রবার রাতে জানিয়েছে, এ আয়োজন এখন...

পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াত প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।শনিবার...
spot_img

এই বিভাগের

spot_imgspot_img