সহজে এশিয়া ও ইউরোপে যেতে বসফরাস, চানাক্কাল ও মারমারা দিয়ে চলাচল করা আন্তর্জাতিক জাহাজের ফি বাড়াচ্ছে তুরস্ক।
সোমবার (১৬ জুন) তুর্কি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহর খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে দেশটির এক শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তুরস্কের জলপ্রণালী ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর ফি বাড়াচ্ছে তুরস্ক। আগামী ১ জুলাই থেকে জাহাজগুলোকে পূর্বের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি ফি প্রদান করতে হবে তুরস্কের সরকারকে।
তুরস্কের পরিবহন ও অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল কাদির উরালোগ্লু জানান, এটি আকস্মিক কোনো সিদ্ধান্ত নয়, বরং প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ২০২২ সালের শুল্ক পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্তের ৪র্থ ধাপ, যেখানে শুল্ক ফি গত বছরের তুলনায় ১৫% বাড়িয়ে প্রতি টনে ৫.৮৩ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নতুন হার ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
বিস্তারিত আলাপে তিনি বলেন, মন্ট্রেক্স কনভেনশন চুক্তির আওতায় ইস্তানবুল এবং চানাক্কালের প্রণালীগুলো দিয়ে অতিক্রম করা এবং যাত্রাবিরতি না করা আন্তর্জাতিক জাহাজগুলোর নেট টনের উপর ভিত্তি করে যে শুল্ক ফি আদায় করা হয়ে থাকে, তা নির্ধারণের মানদণ্ড ছিলো ‘গোল্ড ফ্রাঁ’(gold franc)। ২০২২ সালের আগ পর্যন্ত ৩৯ বছর যাবত এর মান ০.৮ ডলার নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু এখন সেটি সমুদ্র বিষয়ক মহাপরিচালনা বিভাগ কর্তৃক প্রতিবছর হালনাগাদ করা হচ্ছে।
হালনাগাদে দেখা গিয়েছে গোল্ড ফ্রাঁ’(gold franc) এর মান বহু আগেই বেড়েছে। তাই আমরা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে শুল্ক ফি ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.৮৩ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সোনার বাজার অনুযায়ী এই শুল্ক বৃদ্ধি আমাদের দ্বারা সরবরাহকৃত জনসেবার স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে শুল্ক ফি আদায় করি, তার মাধ্যমে আমরা নিয়মিত আমাদের অবকাঠামো ও জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করি। যেনো বিশ্বের সবচেয়ে সংকীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাকৃতিক জলপথগুলোর অন্যতম এই প্রণালীগুলোতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও পরিবেশের সুরক্ষা আরো ভালোভাবে নিশ্চিত করা যায়। তাই বর্তমান সোনার বাজার অনুযায়ী ‘গোল্ড ফ্রাঁ’(gold franc) এর মান পুনঃনির্ধারণের ফলে আমাদের খরচগুলো আরো ন্যায্যভাবে প্রতিফলিত হবে।
এই মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৫১,০৫৮টি ট্রানজিট জাহাজ ইস্তাম্বুল ও চানাক্কালের প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করেছে, যার মাধ্যমে তুরস্ক ২২৭.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে।
১৯৩৬ সালে স্বাক্ষরিত মন্ট্রেক্স কনভেনশন অনুসারে, তুরস্ক ইস্তানবুল ও চানাক্কালের প্রণালীগুলো দিয়ে যাওয়া জাহাজ থেকে লাইট-হাউজ, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহ বিভিন্ন ধরণের পরিষেবা ফি আদায়ের অধিকার রাখে।
পূর্বে জাতিসংঘ স্বীকৃত স্বর্ণমুদ্রা ‘গোল্ড ফ্রাঁ’(gold franc) হিসেবে এসব প্রণালী ব্যবহার করা জাহাজগুলো কর্তৃপক্ষকে ‘জার্মিনাল ফ্রাঁ’ (Germinal franc) নামে একটি সাধারণ স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করতো।
১৯৩৬ সালে এক ফ্রাঁ সমান ছিল ০.২৯ গ্রাম (০.০১০২৩ আউন্স) বিশুদ্ধ সোনা। পরে যখন এই ফ্রাঁর প্রচলন বন্ধ হয়ে যায়, তখন থেকে মার্কিন ডলারে অর্থ প্রদান শুরু হয়। এক্ষেত্রে ১ ফ্রাঁর মান ০.২৯ গ্রাম সোনাই ধরে রাখা হয়, যেটা বাজার বিনিময় হার পরিবর্তন হলেও অপরিবর্তিত থাকতো।
১৯৮৩ সালে তুরস্ক তার তৎকালীন টোল অধিকার প্রায় ৭৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে এক ‘গোল্ড ফ্রাঁ’(gold franc) স্বর্ণ্মুদ্রার মূল্য ০.৮০৬৩ নির্ধারণ করে, যা আগামী ১ জুলাই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এতদিন পর্যন্ত এই ৭৫ শতাংশ হ্রাসকৃত সোনার ফ্রাঁর মূল্য ($০.৮০৬৩) বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের সাথে গুণ করে ফি নির্ধারণ করা হতো।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতি ও সোনার দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই ফি বহু আগেই তার প্রকৃত মান হারিয়ে বসে, যার ফলে তুরস্ক প্রকৃত অর্থে বহু বছর যাবত কম টোল আদায় করে আসছিলো।